জেলা প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২৩, ০৭:৩৪ পিএম
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব অনেকটা কেটে গেলেও এর তাণ্ডব চিহ্ন রেখে গেছে কক্সবাজারের উপকূলীয় টেকনাফ উপজেলা এবং বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। সেখানকার প্রায় ৮০ শতাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়া, হ্নীলা হোয়াইক্ষ্যং, উখিয়ার পালংখালী এবং জালিয়াপালং এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় দুই সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সেখানে ঘরবাড়ি, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উপড়ে গেছে। সেন্টমার্টিনে গাছ পড়ে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রশাসন নিশ্চিত করেনি মৃত্যুর খবর। তবে গাছ পড়ে আহত হয়েছেন সাতজন। মিয়ানমারে মারা গেছে তিনজন।
পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতায় মেনে পড়েছেন নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, রেড ক্রিসেন্ট, আনসার-বিডিপি, পুলিশ ও এনজিও কর্মীরা।
রোববার (১৪ মে) বিকেলে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, এই মুহূর্তে সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতি থেমে গেছে। তবে বাতাসের কারণে ৮০ শতাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দ্বীপের গাছপালা বাড়িঘর ও রাস্তার উপর এলোপাতাড়ি হয়ে পড়ে থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে আসতে শুরু করেছে। অনেকের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আহত হয়েছে এক নারীসহ তিনজন।
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা ইউপি সদস্য আবুল ফয়েজ ঢাকা মেইলকে বলেন, বাতাসের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর ছিল। মানুষের ঘর বাড়ির টিন, ছাউনি, কাঠ, বাঁশ উড়িয়ে নিয়ে গেছে। বড় বড় গাছ ও নারিকেল গাছ দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে। দোকানপাট ভেঙে উড়ে গেছে। পুরো সেন্টমার্টিনে বৃষ্টির পানি ও বাতাসের তীব্রতায় সবকিছু ধোঁয়াশা হয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মূল আঘাত করেছে মিয়ানমারে। ফলে বাংলাদেশে অনেকটা কম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা টেকনাফ থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ মিয়ানমারের সিট্যুয়ে অঞ্চল দিয়ে চলে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের মূল ঝুঁকিটা চলে যাবে মিয়ানমার অঞ্চল দিয়ে। টেকনাফ, কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত। এর ফলে শুরু থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আমাদের যে ঝুঁকির আশঙ্কা ছিল, সেটা কেটে গেছে।
আবহাওয়াবিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার পিক আওয়ার ছিল দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এ সময়ে দ্রুত বেগে জলোচ্ছ্বাস প্রবাহিত হয়েছে। তখন ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া ছিল।
এদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে আছড়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার গণমাধ্যম। তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
মিয়ানমার আবহাওয়া অফিস বলছে, রাখাইন রাজ্যের সিট্যুয়ে শহরের কাছে ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার গতি নিয়ে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় মোখা। দেশটির সেনাবাহিনীর তথ্য বলছে, কিয়াউকপিউ ও গওয়া শহরে ঘরবাড়ি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোবাইল ফোনের টাওয়ার, নৌকা, ল্যাম্পপোস্ট ক্ষতি হয়েছে। মোখার তাণ্ডবে দেশটির বৃহত্তর শহর দক্ষিণ পশ্চিমের কোকো দ্বীপপুঞ্জের বেশ কিছু ভবনের ছাদ উড়ে গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, তীব্র বাতাসে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ৮০ শতাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা পডে কোনো কোনো এলাকার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ ছিল। তবে ঝড়ের গতি কমে এলে গাছপালা সরানো হয়। বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, রামু ও উখিয়ার উপকূলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান। তবে কোথাও ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমদ ঢাকা মেইলকে জানান, শুষ্ক মৌসুমে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ৫৯৫ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ সুরক্ষিত করা হয়েছে। কারণ চলতি অর্থবছরে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর, টেকনাফে ৩২ কোটি টাকার জরুরি ভিক্তিতে বাঁধের মেরামত করা হয়েছে। এবার ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ৪/৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হলেও টেকসই বেড়িবাঁধ থাকায় কোনো এলাকায় পানি ঢুকতে পারেনি।
সর্বশেষ জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যানুয়ায়ী, ৬৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে আড়াই লাখ লোক নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছে।
প্রতিনিধি/জেবি