জেলা প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২৩, ০৫:১৩ পিএম
উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মোখা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দিনরাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি-সিপিপিসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংগঠনের সাড়ে ৯ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক। তবে এই জেলায় এখনো ঘূর্ণিঝড়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
রোববার (১৪ মে) জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, পৃথক পৃথক স্থানে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পতাকা টানানো হয়েছে। সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্টের বিভিন্ন টিম মাইকিং করে বিপদকালীন প্রস্তুতিসহ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছে।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বরগুনা ইউনিটের সদস্য তানজিলা আক্তার রিমা বলেন, যখনই কোনো দুর্ঘটনা বা ঘূর্ণিঝড় আসে আমাদের সদস্যরা সেখানেই ছুটে যায়। এক কথায় আমরা সব সময় সবার পাশে থাকার চেষ্টা করছি সব পরিস্থিতিতে। তেমনিভাবে ঘূর্ণিঝড় মোখার সব প্রস্তুতিতে আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে।
সদর ইউনিয়নের সিপিপির ইউনিট প্রধান ইউপি সদস্য পিন্টু বলেন, ঝড় তুফান যাই আসুক না কেন আমরা সবসময়ই জনগণের জন্য নিজেদের জীবনবাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন স্থানে আমাদের ৮নং মহা বিপদ সংকেতের পতাকা টানানো রয়েছে যাতে করে গ্রামের মানুষ একটু হলেও হুঁশিয়ারি হতে পারে। এখনো আমাদের টিম মাঠে আছে, আবহাওয়া পরিস্থিতি বুঝে কাজ করে যাচ্ছি।
আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের টিম লিডার গাজী জিয়াউল হক তুহিন বলেন, বৃহস্পতিবার থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত মানুষকে সতর্ক করছি। রিকশায় করে মাইকিং চলছে। ছোট ছোট রাস্তায় হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখছি যাতে করে কোনো সমস্যা না হয়। ঘূর্ণিঝড় 'মোখা' মোকাবেলায় আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরগুনার উপপরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা সবসময়ই দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করে যাই নিজেদের জীবনবাজি রেখে। জেলায় আমাদের মোট সিপিপির আট হাজার ৪৬০ জন কর্মী রয়েছে। এবছর বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ৮নং মহাবিপদ সংকেত দেখালে আমাদের কর্মীরা বিভিন্ন ইউনিটে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের পাশাপাশি আরও অনেক সংগঠন ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে। বিপদকালীন প্রস্তুতিসহ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মানুষের মাইকিং করে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মিটিং করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নগদ অর্থ আট লাখ ৪০ হাজার টাকা, ১৪২ বান্ডিল টিন, ২৯৪ মেট্রিকটন চাল, ২০০০টি কম্বল, শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বরগুনায় তিনটি মুজিব কেল্লা, বরগুনা সদরে উপজেলায় ১৮৫টি, আমতলী উপজেলায় ১১১টি, তালতলী উপজেলায় ৫৩টি, পাথরঘাটা উপজেলায় ১২৪টি, বেতাগী উপজেলায় ১১৪টি, বামনা উপজেলায় ৫৫টিসহ মোট ৬৪২টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ সিপিপি- ৮৪৬০ জন, রেড ক্রিসেন্ট ৩০০ জন, জাগনারী ১৫০ জন, ব্র্যাক ৩৫৫ জন, রোভার স্কাউট ৩৫০ জন, উৎসর্গ ফাউন্ডেশন ১৫০ জনসহ মোট নয় হাজার ৬১৫ জন সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে অর্ধশতাধিক মেডিক্যাল টিম।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
প্রতিনিধি/জেবি