জেলা প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২৩, ০১:৪৬ পিএম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা-এর প্রভাবে নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। হুমকির মুখে আছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাতিয়ার সঙ্গে শনিবার সকাল থেকে সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ আছে। ফলে হাতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েছেন। সোনাদিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের জাহাজমারা টাংকির ৫৪ নং স্লুইসের বেড়িবাঁধটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গা থাকায় বড় জোয়ার এলে বেড়িবাঁধসহ স্লুইসটি তলিয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দিনাজ উদ্দিন বলেন, ৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। ফলে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। ঘূর্ণিঝড় মোখায়ও নিঝুমদ্বীপে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার আশংকা করছি।
হাতিয়া উপজেলার নলচিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর উল্লাহ শিবলু বলেন, নলচিরা এলাকায় বাতাসের গতিবেগ অনেক বেড়ে গেছে। আমার ইউনিয়নে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেলে নলচিরার অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
জানা যায়, হাতিয়ার মোট ১১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে। এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে, শনিবার সারাদিন বৃষ্টিহীন আকাশ ছিল ঘোমট, তবে সন্ধ্যার আগ থেকে আকাশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং নদীতে ঢেউ উঠেছে। ঢেউয়ের মাত্রা সাধারণ সময়ের থেকে বেশি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতংক এবং শংকা তৈরী হয়েছে। আজ সকাল থেকেই জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতকৃত ৪৬৩ টি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানীয়দের যাওয়ার প্রবণতা কম থাকলেও প্রত্যেকেই শিশু, বৃদ্ধসহ কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বলছেন জেলা প্রশাসক।সে সঙ্গে নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের একাধিক টিম। দিনভর স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করে ও সাইরেন বাজিয়ে স্থানীয়দের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য আহবান জানান। তবে, নোয়াখালীর উপকূলীয় ৪ উপজেলা হাতিয়া, সুবর্নচর, কোম্পানীগঞ্জ এবং কবিরহাট উপজেলার মানুষদের চোখেমুখে ঘুর্ণিঝড় মোখার ভয় এবং আতংক বিরাজ করছে। বেড়িবাঁধের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা জনবসতিগুলো তারা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় নোয়াখালীতে ৪৬৩ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে দুর্যোগ কালীন ৩ লক্ষ ৩ হাজার ৬০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া আটহাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবী ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ১০২ টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নোয়াখালীতে কর্মরত সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ২৪২ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।
প্রতিনিধি/একেবি