images

সারাদেশ

কক্সবাজারে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ 

জেলা প্রতিনিধি

১৩ মে ২০২৩, ০৪:৫৯ পিএম

কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা ঘূর্ণিঝড় মোখার কবল থেকে রক্ষা পেতে আগেভাগেই আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন, টেকনাফ,  কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। 

এছাড়া অন্যান্য নিচু এলাকা থেকেও অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছেন। শনিবার  (১৩ মে)দুপুরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর থেকে নিম্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ে । এরপর থেকে কক্সবাজারর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেকের শতাধিক মানুষ নিজ উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসেন।

শনিবার দুপুর থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের লোকজনকে সরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের কিছু বাসিন্দা নিজ উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে গেছেন।

কক্সবাজারের শহরের পৌর প্রিপ্যারাটরি উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, এই বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকজন। তারা শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

আশ্রয় নেওয়া মিনুয়ারা বেগম বলেন, আমাদের ঘর নাজিরারটেকের সাগর তীরে। যেকোনো সময় পানি উঠতে পারে। তাই প্রাণ বাঁচাতে আগে থেকে চলে আসছি। আল্লাহ জানে এই ঘূর্ণিঝড়ের পরিণতি কি রকম। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক।

নুরুল আলম নামের একজন বলেন, আমি অসুস্থ, তাই আগে থেকে পরিবার নিয়ে চলে আসলাম। টেলিভিশন ও এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছিল আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হতে পারে তাই সবকিছু নিয়ে ডিসি স্যারের কার্যালয়ে চলে আসলাম।

hg

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জেলায় সিসিপির আট হাজার ৬০০ জন এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। সেন্টমার্টিনে নেভি, কোস্ট গার্ড, পুলিশসহ অন্যদের মিলিয়ে ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। সেগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে। 

দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২৫ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ৫.৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩.৫ মেট্রিক টন বিস্কুট, ৩.৪ মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। 

জেলায় যে ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেগুলোতে ৫ লাখ ৫৯৯০ জন লোক আশ্রয় নিতে পারবে। শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকে মেডিকেল দল, কোস্ট গার্ড, নৌ-বাহিনী, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্হাগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কাজও শুরু করে দিয়েছেন। 

শনিবার দুপুরে কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী  আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে এখন ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত ঘোষণা হয়েছে। রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এ সময় ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে। সংকেত আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, সে জন্য বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার সকল আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।

সেনাবাহিনীর পক্ষে মেজর ফাহাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে আমরা ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব। এ সংক্রান্ত আমাদের যোগাযোগ সেল খোলা হয়েছে। আমরা আমাদের টিমের সাথে যোগাযোগ রাখব এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সকল ধরনের ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের  পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। দুর্যোগকালীন লোকজনকে সহায়তা এবং সহযোগিতা করতে হবে। লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।যেটি সার্বক্ষণিক সচল থাকবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করার জন্য বলা হচ্ছে। 

প্রতিনিধি/একেবি