জেলা প্রতিনিধি
১১ মে ২০২৩, ০৩:২৬ পিএম
আগামী রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। তবে এর অগ্রভাগ আগের দিন অর্থাৎ শনিবার রাতেই বাংলাদেশের উপকূল স্পর্শ করবে। এ জন্য দেশের উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা জাড়ি করা হয়েছে। তবে তা অমান্য করে কক্সবাজার সৈকতে গোসলে ব্যস্ত হাজারো পর্যটক। অন্যদিকে উপকূলে ফিরে আসেনি দুই হাজার মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার।
গভীর বঙ্গোপসাগরে প্রথমে লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ এরপর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া ‘মোখা’ বর্তমানে যে গতিতে এগোচ্ছে সেভাবে এগিয়ে চললে রোববার এটি কক্সবাজার উপকূলে মারাত্মকভাবে আঘাত হানবে। সে কারণে কক্সবাজারসহ দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছেন আবহাওয়া অফিস। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার সব সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয়সহ ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নগদ ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৪৯০ মেট্টিক টন চাল, সাত মেট্টিক টন শুকনো খাবার, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন মজুত রাখা হয়েছে।
শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মো.সামমছুদ্দৌজা নয়ন জানিয়েছেন, উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে আগামী এক সপ্তাহ সাগর উত্তাল থাকবে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে মোখা যে গতিতে এগোচ্ছে সেভাবে আসলে কক্সবাজারে আঘাত হানতে পারে।কক্সবাজার উপকূলে এখন ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারী সংকেত দেখানো হয়েছে।এই সংকেত আরো বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (১১মে) দুপুর ২টা পর্যন্ত অবশ্য কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মোখার প্রভাবে সাগর কিছুটা উত্তাল হলেও স্বচ্ছ আকাশ আর তীব্র দাবদাহ বিরাজ করছে কক্সবাজারে। সৈকতে লাল পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে। হাঁটু পানির নিচে পর্যটকদের নামতে দিচ্ছেনা লাইফ গার্ড কর্মীরা। তারপরও কিছু পর্যটক এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সৈকতে গোসলে নামছেন।
কক্সবাজার পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, তীব্র দাবদাহের পাশাপাশি সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। পর্যটকদের হাঁটু পানির নিচে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। যারা অমান্য করছেন, তাদের বুঝিয়ে সমুদ্র থেকে তুলে দিচ্ছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা হচ্ছে।
এদিকে উপকূলে ফিরে আসছে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন কক্সবাজারের জেলেরা। এরইমধ্যে উপকূলে নোঙর করেছে প্রায় তিন হাজার মাছ ধরার ট্রলার।
বৃহস্পতিবার বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেখা যায়, সাগরে মাছ শিকারে যেতে উপকূলে ট্রলারে মজুত করা হয়েছিলো রসদ। সব প্রস্তুতি শেষে জেলেরাও উঠেছিলেন ট্রলারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সাগরে মাছ শিকারে যাননি তারা। বাঁকখালী নদীর মোহনায় ফিরছে একের পর এক মাছ ধরার ট্রলার। জেলেরা বলছেন, সাগর উত্তাল হয়ে উঠায় ফিরে এসেছেন তারা।
এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি মোহাম্মদ আলী বলেন, সাগর উত্তাল হয়ে উঠার পাশাপাশি বাতাস বেড়েছে। তাই মাছ শিকার না করে ২১ জেলে নিয়ে উপকূলে ফিরে এসেছি।
জেলে মোহাম্মদ নাছির বলেন, জীবন বাঁচানোর জন্য উপকূলে অবস্থান করতে হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেটে গেলে আবারো সাগরে মাছ শিকার যাব।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, যে ট্রলারগুলো এখনো সাগরে মাছ শিকার করছে তারা সংকেত বাড়লে উপকূলে ফিরে আসবে। এরইমধ্যে কক্সবাজার উপকূলে নোঙর করেছে প্রায় তিন হাজার ট্রলার। এখনো সাগরে আছে দুই হাজারের মতো ট্রলার।আজ বা কালের মধ্যে এসব ট্রলারও উপকূলে নোঙর করবে বলে জানান দেলোয়ার।
প্রতিনিধি/একেবি