আসাদুজ্জামান লিমন
২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১৯ এএম
‘আগে ইরি ধান চাষ করতাম। ফলনও হইত ভালো। কিন্তু খালগুলো ভরাট হওয়ায়, নদী থেকে পানি অাসে না। সেজন্য ধানে সেচ দেওয়া যায় না। তাই বোরো মৌসুমে রবি শস্যের আবাদ করি। ফাল্গুন শেষে ফসল তোলার পর কী চাষ করুম তা নিয়ে চিন্তা হয়। জমি তো আর খালি রাখা যায় না। বাধ্য হয়ে চৈত্র মাসে পাট বুনছি। কিন্তু খরা ও সেচের অভাবে ফলন কেমন হইব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে।’
—বলছিলেন মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার উত্তর রাজদী গ্রামের কৃষক এনায়েত হাওলাদার।
এনায়েত আরও বলেন, আমগো এলাকার জমি উর্বর। বছরে তিন ফসল হয়। রবি মৌসুমে কিছু এলাকায় বোরো ধান চাষ হয়। যারা সেচের ব্যবস্থা করতে পারেন না, তারা মাস কলাই, মুসর কিংবা সরিষা চাষ করেন। অনেকেই আবার ধনিয়া পাতাও জমিতে চাষ করেন। সমস্যাটা হয় শুকনা মৌসুমে, তখন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বৃষ্টিতে জমি ভিজলে পাট বীজ বোনা হয়।
পাট বুনলে অনেক শ্রম দিতে হয়। কিন্তু সেই তুলনায় লাভ হয় না।
একই কথা জানালেন ওই গ্রামের শৌখিন চাষি মাঈনুল ইসলাম। তিনি বলেন, চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে পাট ছাড়া অন্য কোনো ফসল হয় না। বাপ-দাদারা আগে শুকনার মৌসুমে আমন ধান বুনত। যেটা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ফলন আসত। তখন জমিতে পানি থাকত। এখন জোয়ারের পানি আসতে আসতে ভাদ্র মাস। তাই আউশ ধান তেমন একটা চাষই হয় না। বাধ্য হয়ে এই এলাকার কৃষকরা পাট বোনেন। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি।
বিপত্তির কথা খোলাসা করে জানালেন ফজলু মিয়া।
তিনি জানান, পাট বীজ পুরাই বৃষ্টি নির্ভর। চৈত্র মাসে বৃষ্টি এলে পাট বীজ বোনা হয়। কিন্তু সব মৌসুমে বৃষ্টি হয় না। অনেকেই খাল, ডোবা কিংবা পুকুর থেকে কৃত্রিম সেচ দিয়ে, জমি ভিজিয়ে পাট বোনেন, এতে খরচ বাড়ে। সব সময় পানিও মেলে না। বড় সমস্যাটা হয় সঠিক সময়ে জোয়ারের পানি না এলে জমি থেকে পাট তুলে পচানো যায় না। ফলে জমিতে দীর্ঘদিন পরিপক্ক পাট গাছ ফেলে রাখতে হয়। এতে করে সঠিক সময়ে পাট বিক্রি করতে না পারায় যেমন লোকসান হয় তেমনি, আমন মৌসুম পেরিয়ে যায়। সঠিক সময়ে আমন ধান বপন করা যায়।
কালকিনির উত্তর রাজদী গ্রামের মতোই মিনাজদী, জোনারদন্দী, কাশিমপুরসহ উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও তিন ফসলের চক্রে পাট নিয়ে বিপাকে আছেন।
সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যমতে, কালকিনি উপজেলার অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে মাসে পাট চাষ ছাড়া অন্য কোনো ফসল চাষের সুযোগ পান না। যেসব কৃষকদের জমি কিছুটা উচু তারা রবি মৌসুম থেকে বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি এই সময়ে মরিচ, ঢেড়স, পুই শাকের মতো শাক সবজি চাষ করেন। জমিতে বর্ষার পানি এলে অামন ধানের বীজ লাগান। যার ফলন তুলতে পারেন কার্তিক থেকে অগ্রহায়ন মাসের মধ্যে। এরপর রবি শস্যের অাবাদ করেন। এভাবেই এই এলাকায় তিন ফসলের চক্র শেষ হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক দ্বিগবিজয় হাজরা ঢাকা মেইলকে জানান, মাদারীপুরের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু পাটি চাষের উপযোগী। তাই এসব জমিতে পাট ভালো জন্মে। পানির যে সমস্যা সৃষ্টি হয় এর জন্য বৃষ্টি নির্ভর হলে হবে না। প্রয়োজনে পাট রোপণ থেকে প্রক্রিয়াজাত করার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হবে। তবে পাটের বিকল্প হিসেবে জেলার আউস ধান চাষ করা যায়।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন মাদারীপুর প্রতিনিধি বিধান মজুমদার)
/এজেড