images

সারাদেশ

লিটনের সুন্দর ভাবনা, সেলুনে পাঠাগার

জেলা প্রতিনিধি

১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০২:০০ পিএম

ফ্যাশন দুনিয়ায় চুল একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই চুল কাটতে গিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট হয় অনেক। অলস বসে এই সময় নষ্ট না করে বই পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেলুনে। খ্যাতনামা লেখকদের বই সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে সেলুনে। একদিকে সেলুন অন্যদিকে গ্রন্থারের আলো ছড়াচ্ছে। এটি অন্যসব সেলুনের মতো নয় বিধায় সবারই নজর কাড়ে। সেলুনে চুল, দাড়ি কাটাতে গেলেই দেখা যাচ্ছে সামনে থরে থরে সাজিয়ে রাখা আছে বিভিন্ন খ্যাতনামা লেখকের বই। 

রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্রের কালজয়ী সব গল্প, উপন্যাসসহ এখানে রয়েছে দেশ বরেণ্য লেখকদের বই। সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করানোর ফাঁকে ফাঁকে অপেক্ষমান লোকদের জন্য অলস সময় না কাটিয়ে জ্ঞান বিস্তারের ব্যবস্থা করেছেন নরসুন্দর লিটন চন্দ্র শীল। সেলুনেই অর্জন করা যাচ্ছে সাহিত্যচর্চা বা নানা বিষয়ে জ্ঞান। 

ব্যাপারটি স্বপ্ন নয়, এমনটিই দেখা গেল ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের পোনাবালিয়া বাজারের একটি সেলুনে। 

সেলুনটির মালিক লিটন চন্দ্র শীল জেমস ভক্ত হওয়ায় দোকানটির নাম দিয়েছে ‘নগর বাউল হেয়ার কাটিং’। এলাকায় তাকে নগর বাউল লিটন নামেই সবাই ডাকে। দোকানটি তিনি সাজিয়েছেন ভিন্নভাবে। সেলুনের দেয়ালে কবি, লেখক ও মনীষীদের বাণী লিখে রেখেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী মাদার তেরেসা, দার্শনিক-লেখক-সংগীতজ্ঞ স্বামী বিবেকানন্দ, আধ্যাত্মিক ফকির সাধক লালন সাঁই, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বামপন্থী বিপ্লবী নেতা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরসহ অনেকের ছবি চার দেয়ালে টাঙানো রয়েছে। ওই এলাকার মানুষ বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। এলাকাবাসী লিটনের দোকানকে সেলুন লাইব্রেরি হিসেবে একনামে চেনেন। 

সেলুনের নিয়মিত পাঠক স্কুলশিক্ষক সাইদুর রহমান   বলেন, পড়াশোনা বেশি না করলেও লিটন শীল একজন ব্যতিক্রমী মানুষ, জ্ঞানী লোকের মতো তার মেধা, সেলুন দিয়ে এলাকায় তিনি জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন। লিটন সনাতন ধর্মের হলেও এখানে তিনি ইসলামিক বইও রাখেন। আমাদের সন্তানদেরও এই সেলুনে পাঠাই। যেন ওদের মেধার বিকাশ ঘটে।

লিটনের সেলুনে আসা এক শিক্ষার্থী জানায়, আমরা স্কুল শিক্ষার্থীরা অনেকেই বই কিনে পড়তে পারি না। লিটন দাদার সেলুনে এসে বই পড়ার চাহিদা মেটাই। এই ইউনিয়নের কোথাও পাবলিক লাইব্রেরি নেই। এ কারণে সেলুনে এসে বই পড়ি। আমি ও আমার বন্ধুরা এখান থেকে মাঝে মধ্যে বই বাসায়ও নিয়ে যাই।

সেলুনে লাইব্রেরির উদ্যোক্তা নরসুন্দর লিটন চন্দ্র শীল বলেন, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বইয়ের পাঠক কমে গেছে। তাই মানুষের বই পড়ার অভ্যাসটাকে বাড়িয়ে দিতে আমার এই উদ্যোগ। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও একটি কন্যা শিশু নিয়ে আমার সংসার জগৎ। সেলুনের উপার্জন দিয়ে খেয়ে পরে এই নিম্ন আয়ের অর্থের সামান্য একটা অংশ দিয়ে পাঠকদের জন্য বই ক্রয় করি।

লিটন বলেন, এটা আমার আত্মতৃপ্তি। বইয়ের মাধ্যমে আমার ইউনিয়ন এবং আমার দেশের কৃষ্টি-কালচার ঐতিহ্য সবাই জানবে, কবি-লেখক ও মনীষীদের চিনবে, স্বাধীনতার ইতিহাস জানবে। বর্তমান প্রজন্মকে বই পড়ার ওপর কিঞ্চিৎ আগ্রহ বাড়াতে পারেলে এ থেকে আমি জাতির কাছে দায়মুক্ত হতে পারবো।

প্রতিনিধি/একেবি