ঢাকা মেইল ডেস্ক
১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৫৪ পিএম
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের খুশি সবার সাথে ভাগাভাগি করতে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও নাড়ির টানে গ্রামের ফিরে যায় মানুষ। তবে সড়কপথে চলাচলকারী বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গের মানুষের সেই আনন্দ ম্লান করে দিতে পারে এক যুগের বেশি সময় ধরে চলা বিআরটি প্রকল্প। চলমান এই প্রকল্পের কাজ, সরু রাস্তা, বিভিন্ন স্থানে গর্তসহ বেশকিছু কারণে এবারও ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভোগান্তির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই মহাসড়কে প্রতি বছর ভোগান্তির অন্যতম কারণ এই বিআরটি প্রকল্প।
জানা গেছে, বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের অনেক অংশে যান চলাচলের সড়ক এক লেন হয়ে যাওয়া, মহানগরীর টঙ্গী থেকে টঙ্গী বিসিক এলাকা পর্যন্ত অংশে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ, অনেক অংশ কার্পেটিং করা বাকি রয়েছে।
এসব কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এ অংশে যানজটের শঙ্কা করছেন এ পথে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। গাজীপুর মহানগর পুলিশ এসব বিষয় নিয়ে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিআরটি কর্তৃপক্ষের কাছে বেশকিছু সুপারিশ করেছে।
পুলিশ ও প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয় গাজীপুরকে। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন ২৩ জেলার লাখ লাখ পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগ এবং উত্তরবঙ্গের মানুষ এ পথ ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পথে মানুষের যানজটের ভোগান্তি দূর করতে ২০১২ সালে হাতে নেওয়া হয় বিআরটি প্রকল্প। প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন নির্ধারণ করা হয়েছিল। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যয়ও বেড়েছে। সবশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রকল্প চালু হওয়ার পর এক দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেল। চলতি বছরও চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই এই বিআরটি। ফলে এ পথে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গ ছাড়ছে না দুর্ভোগ আর ভোগান্তি।
বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সরে জমিনে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিমি সড়ক ঘুরে দেখা যায়, রাজধানী থেকে গাজীপুরে প্রবেশের মুখে তুরাগ সেতুতে দুটি লেনে গাড়ি প্রবেশ করছে এবং একটি লেনে গাড়ি ঢাকা যাচ্ছে। ফলে ঢাকা মুখী লেনে যানবাহনের গতি কমে গিয়ে সারি বড় হচ্ছে। টঙ্গী এলাকায় বাটার সামনে ফ্লাইওভারে ওঠার জন্য নির্মাণ কাজ করার কারণে এখানে সড়ক এক লেন করে ফেলা হয়েছে। ফলে উভমুখী লেনে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে সিঙ্গেল লেনে রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ, যেখানে পানি জমে কাদা, ময়লা এবং গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ এলাকায় উড়াল সড়কের নিচে কার্পেটিং এখনও অনেক জায়গায় শেষ হয়নি। টঙ্গীর বাটার সামনে থেকে টঙ্গী বিসিক পর্যন্ত সড়কের নিচের অংশে অনেক জায়গায় কার্পেটিং করা হয়নি। কাজ চলমান থাকায় সড়ক সংকুচিত হয়ে মহাসড়কের কোথাও দুই লেন, কোথাও আবার এক লেনে পরিণত হয়েছে। এছাড়া খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা থাকায় গতি কমে গিয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে টঙ্গী এলাকায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।
এ কারণে আজমপুর থেকে ফ্লাইওভারে উঠে ওই এলাকায় গিয়ে নামার সময় যানজটের মুখে পড়ছেন যাত্রীরা। আবার ফ্লাইওভারে ওঠার সময়ে এক লেন থাকায় উপরে এবং একই কারণে নিচে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া সড়কের এরশাদনগর, ছয়দানা, গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের যাত্রী ছাউনির কাজ চলছে। এসব এলাকায় উভমুখী লেন সংকুচিত হয়ে এক লেনে গাড়ি চলছে। ফলে দুপুরেও এসব এলাকায় যানবাহনের গতি কমে দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে। এছাড়া মূল সড়কের ওপর নির্মাণ সামগ্রী, ক্রেন ও জিনিসপত্র, যন্ত্রাংশ যত্রতত্র ফেলে রাখায় অনেক স্থানে সড়কের লেন কমে যাচ্ছে।
চালক ও যাত্রীরা বলছেন, ঈদযাত্রায় সড়কে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বাড়বে। সড়ক প্রশস্ত করা না হলে, ভাঙাচোরা অংশ মেরামত ও সড়কের লেন বৃদ্ধি করা না হলে এবারও সড়কে যানজট হবে। এছাড়া একটু বৃষ্টি হলে ভোগান্তির মাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠবে।
বসুমতি পরিবহনের চালক মেরাজুল ইসলাম জানান, সড়কের অবস্থা খুব খারাপ। ঈদের আগে সড়ক মেরামত করা না হলে ঈদের সময় যানজটে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
অনন্যা পরিবহনের চালক হোসেন আলী বলেন, সড়কের ভাঙাচোরা ঠিক করতে হবে,লেন বাড়াতে হবে। আর না হলে যানজট হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার আলমগীর হোসেন বলেন, আসন্ন ঈদ যাত্রাকে স্বস্তিদায়ক করতে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিআরটির উড়াল সেতুর ওঠানামার স্থানে বসানো দুটি স্পিডব্রেকার ভেঙে ফেলা, সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনার একটি ডাম্পিং স্টেশন অপসারণ, মহাসড়কের দুই পাশের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা, যাতে বৃষ্টিতে পানি না জমে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ফ্লাইওভারের সাটারিংয়ের জিনিসপত্রও খুলে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিআরটি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সড়কের যেসব স্থানে রাস্তা সংকীর্ণ সেখানে প্রশস্ত করা, চৌরাস্তা এলাকার বিআরটির যেসব লোহার খাঁচা-সাটারিংয়ের জিনিসপত্র রয়েছে সেগুলো অপসারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উপকমিশনার বলেন, ঈদ যাত্রার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োজিত করা হবে। সঙ্গে রেকার থাকবে, যাতে কোনো গাড়ি নষ্ট হলে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। আমরা পরিবহন মালিক ও চালকদের সঙ্গে আলোচনা করছি, যাতে সকলে ট্রাফিক আইন মেনে চলে। আশা করছি, ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।
এ ব্যাপারে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ঈদকে সামনে রেখে বিআরাটি প্রকল্পের যেসব অংশে সংস্কার কাজ করা প্রয়োজন সেখানে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে, যেখানে রাস্তা সম্প্রসারণ করা দরকার সেখানে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। চলমান থাকার কারণে কোথাও যদি রাস্তা সংকুচিত হয়ে থাকে সেখানে দ্রুত রাস্তা সম্প্রসারণ করে দেওয়া হবে।
ঈদযাত্রার সার্বিক বিষয়ে বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন ঈদ সামনে রেখে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কিছু সুপারিশ পেয়েছি। সেগুলো এবং আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে সড়ক চলাচল উপযোগী রাখার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা যেকোনো ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা স্বস্তিদায়ক করা হবে এবং কোনো অবস্থাতে সড়কে যানজট হতে দেব না। এর জন্য আমাদের সবরকম প্রস্তুতি রয়েছে।
প্রতিনিধি/এজে/জেএম