images

সারাদেশ

যাত্রীর অপেক্ষায় দৌলতদিয়া ঘাট

ঢাকা মেইল ডেস্ক

১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০১:১৯ পিএম

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাট। এক সময় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকত এ ঘাটে। কিন্তু ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট প্রায় ফাঁকা। যাত্রী না থাকায় অলস সময় পার করছেন লঞ্চের চালক ও শ্রমিকরা।

বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পন্টুনের সঙ্গে সারি সারি লঞ্চ বেঁধে রাখা হয়েছে। যাত্রী না থাকায় চারদিকে সুনসান নীরবতা। দীর্ঘসময় পর স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে একটি করে লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকেও হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড়ছে লঞ্চ। আগে যেখানে ২০ মিনিট পর পর ৮০-১০০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ছেড়ে যেত, সেখানে এখন যাত্রী সংকটে ৩০-৪০ মিনিট পরপর ২৫-৩০ জন যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে লঞ্চগুলো পাটুরিয়া যাচ্ছে।

লঞ্চঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। যাত্রী সংকটে লোকসানে পড়েছেন লঞ্চের মালিকেরা।

Doulotdiaদৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথ। এই পথে বর্তমানে ১৬টি লঞ্চ চলাচল করছে। বর্তমানে প্রতিদিন দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার যাত্রী পারাপার হচ্ছেন। আগে যেখানে পারাপার হতো ৪-৫ হাজার যাত্রী। বিশেষ করে ঈদের আগে ও পরে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে উপচেপড়া ভিড় থাকত।

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় কথা হয় কুষ্টিয়া থেকে আসা ঢাকামুখী যাত্রী রহিম মোল্লার সঙ্গে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি ঢাকার কারওয়ান বাজারে ব্যবসা করি। মাসে একবার হলেও গ্রামের বাড়িতে যাই। দৌলতদিয়া ঘাটে আসলে বেশিরভাগ সময় লঞ্চেই নদী পার হই। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে ১০-১৫ মিনিট পরপরই লঞ্চ পাওয়া যেত। কিন্তু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে লঞ্চে নদী পার হওয়ার ভোগান্তি বেড়েছে। যাত্রী না থাকায় অনেকক্ষণ পরপর লঞ্চ ছাড়ে। আগে যাত্রীরা লঞ্চের জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকত। এখন যাত্রীর অভাবে লঞ্চগুলো বসে থাকে।

আরেক যাত্রী জাহিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, রাজবাড়ীর পাংশা থেকে লোকাল বাসে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি। পদ্মা পার হওয়ার জন্য আধা ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করছি। যাত্রী না থাকায় লঞ্চও ছাড়ছে না। আমরা অনেক ঝামেলায় পড়েছি।

Doulotdiaদৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে বাদাম বিক্রেতা ফরিদ শেখ বলেন, আগে প্রতিদিন ২-৩ হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করতাম। এখন যাত্রী কম থাকায় ৪-৫শ টাকার বাদাম বিক্রি করতে কষ্ট হয়।

এমভি তাজমহল লঞ্চের চালক কামরুল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে ২০ মিনিট পরপর শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়ে যেতাম। এখন এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ২৫-৩০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে হচ্ছে। তেলের খরচও উঠছে না। আমরাসহ মালিক পক্ষ লোকসানে রয়েছে।

লঞ্চঘাটের সুপার ভাইজার মোফাজ্জেল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ৪-৫ হাজারের মতো যাত্রী পারাপার হতো। এখন রমজান মাসেও ঘাটে যানবাহনের চাপ কম থাকায় ২৪ ঘণ্টায় হাজার খানেক যাত্রী পারাপার হচ্ছে। মালিক সমিতি ও ঘাট ইজারাদারের লোকজনের প্রতিদিনের হাজিরার টাকা ওঠানোই কষ্ট হয়ে পড়েছে।

Doulotdiaআরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির দৌলতদিয়া ঘাটের তত্ত্বাবধায়ক নুরুল আনোয়ার মিলন ঢাকা মেইলকে বলেন, যাত্রীশূন্য দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া লঞ্চঘাট। লঞ্চের জন্য আগে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীরা অপেক্ষা করতেন। আর এখন যাত্রীস্বল্পতায় লঞ্চগুলো দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে। অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ফেরিঘাটেও কোনো গাড়ি সিরিয়ালে নেই। ফেরিগুলো ঘাটে গাড়ির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে তারপর ছেড়ে যাচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, যাত্রী কমে গেলেও জনস্বার্থে লঞ্চ পারাপার স্বাভাবিক আছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌপথে ৩৩টি লঞ্চ যাত্রী পারাপারে চলাচল করছে।

তিনি আরও বলেন, রমজান মাস উপলক্ষে এবং তীব্র গরম ও রোদে মানুষ ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। ২৫ রোজার পর থেকে যাত্রী বাড়তে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।

প্রতিনিধি/এসএস/জেএম