জেলা প্রতিনিধি
১০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২০ পিএম
আর মাত্র তিনদিন পরই বিদায় নেবে বাংলা সাল ১৪২৯। শুরু হবে নতুনবর্ষ ১৪৩০। পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নববর্ষের প্রথমদিন পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে যশোর।
যশোরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বর্ষবরণে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে রমজান মাস হওয়ায় আয়োজন স্বল্প পরিসর হলেও বর্ণাঢ্য হবে বলে সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা জানান। এবার বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যশোর থেকে বের হওয়া দেশের প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ঘিরে। বর্ষবরণ ঘিরে যশোরে নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বরাবরেই মতোই ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দান থেকে সকাল ৯ টায় যশোরে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় হবে এ শোভাযাত্রা।
মঙ্গল শোভাযাত্রার নৌকা, দোয়েল, কচ্ছপ, বড় আকৃতির সাপ, কুমির, বাঘ, পুতুলসহ নানা রঙের মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত যশোরের ৩০টির বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন। জেলার চারুপীঠ আট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং চারুতীর্থের শিল্পীদের তুলির রঙিন আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠছে শোভাযাত্রার এসব অনুসঙ্গ।
দেশের প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৫ সালে যশোরে বের হয়। সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহবুব জামাল শামীম দুই সহপাঠীকে নিয়ে যশোরে প্রতিষ্ঠা করেন চারুপীঠ। এ প্রতিষ্ঠানই মঙ্গল শোভাযাত্রার সূতিকাগার। এর ৪ বছর পরই ঢাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়, যা পরে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায়। সামনে নববর্ষ উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বিশেষভাবে উপস্থাপনের জন্য শাভাযাত্রার নৌকা, দোয়েল, কচ্ছপ, বড় আকৃতির সাপ, কুমির, বাঘ, পুতুলসহ নানা রঙের মুখোশ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবারেই ন্যায় এবারও জাতি বর্ণ নির্বিশেষে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো। বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপনে সংস্কৃতির রাজধানীখ্যাত যশোরের ৩০টির বেশি সংগঠনের সদস্যরা শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্ণিল উৎসব ঘিরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তৈরি করেছে ভিন্ন আঙ্গিকের দাওয়াতপত্রও।
বাংলা বর্ষবরণে যশোরের ঐতিহ্য চার দশকের বেশি। করোনা সংক্রমণের কারণে ১৪২৭ ও ২৮ এই দুই বছর নববর্ষের উৎসব ছিল অনেকটা ঘরবন্দি। ১৪২৯ সনে সংক্রমণ কমলেও রমজান মাস হওয়াতে ছোট পরিসরে উৎসবে মাতে যশোরবাসী। এবারও রমজানের মধ্যে পহেলা বৈশাখ আসার দপুরের মধ্যেই সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। বরাবরের মতো পৌর উদ্যানে সকাল ৭টা ১ মিনিটে উদীচী যশোরের আয়োজনে হবে প্রায় আড়াই ঘন্টার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান বিপ্লব জানান, উদীচী হত্যাকাণ্ডের দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার না হওয়ায় এবারের নববর্ষ উৎসব স্লোগান করা হয়েছে বৈশাখের এই তীব্র দহনকাল-ছিন্ন করুক বিচারহীনতার জাল'।
স্লোগানের সঙ্গে মিল রেখে আমন্ত্রণ পত্রে ব্যবহার করা হয়েছে পোস্টার। বাঁশের চাটাইয়ের উপর লালকাগজে সাদা রঙে লেখা হয়েছে আমন্ত্রণপত্র।
তিনি আরও জানান, শিশু- কিশোরসহ প্রায় তিনশ' সংগীত, নৃত্য ও অভিনয় শিল্পী বৈচিত্র্যময় নানা আয়োজনে নববর্ষ উৎসবের ৪৮ বছরে পা রাখছে উদীচী যশোর।
প্রাচীন সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরবিতান সংগীত একাডেমি সকাল সাড়ে ৬টায় ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানের শতাব্দী বটমূলের রওশন আলী মঞ্চে আলোকের এই অর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও' স্লোগানকে সামনে রেখে নববর্ষকে আহ্বান জানাবে। পুনশ্চ যশোর নববর্ষের প্রথম দিন সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে মুসলিম একাডেমি প্রাঙ্গণে করবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিবর্তন যশোর নিজস্ব কার্যালয়ে আবৃত্তির আয়োজন করেছে।