images

সারাদেশ

‘বঙ্গবন্ধু ডাকেন মহিউদ্দীন দরজা খোল, আমি আইছি’

জেলা প্রতিনিধি

০৭ মার্চ ২০২৩, ১০:২০ এএম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব কাছে থাকা মানুষেরা অনেকেই এখন জীবিত নেই। যে কজন বেঁচে আছেন তাদের এজকজন মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর চীফ সিকিউরিটি অফিসার। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে মহিউদ্দীন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের স্মৃতিচারণকালে মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভা মঞ্চে উঠার পর লাখ লাখ জনতাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন এ সময় তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ভাষণ শুনে প্রায়ই শরীর শিউরে উঠছিল। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে আমি মুহূতেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ফলে মনের অজান্তেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেছনে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছিলাম।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মোহাম্মদ মহিউদ্দীন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, উনার সম্পর্কে কিছু বলতে গেলেই নানান স্মৃতি মনে পড়ে যায়। তাই সাক্ষাৎকার দেই না। আমাকে যে বঙ্গবন্ধু এত বড় পুরস্কার দিবে, বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে যে আমি এত বড় পুরস্কার পামু। আমার সাতবার জন্ম মৃত্যু হইলেও এটার সমান হইব না। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আমি বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছু করতে পারলাম না। পাশাপশি আমার সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য আমি বঙ্গবন্ধুর পায়ের নিচে স্থান পাইছি। আমার দুর্ভাগ্য যে কিছুই করতে পারি নাই। এই যে বাইচা আছি, কুত্তার জীবন। তুষের আগুনে মতো জ্বলতাছি। কথা বলি, চলিফিরি, খাই দাই বলতে তো পারি না। আগেও বলতে পারি নাই। এখনও বলতে পারি না। কিন্তু বাইচা আছি। একরকম জীবিত লাশ হইয়া বাইচা আছি। রাতে ঘুমাতে পারি না। চকি থেইকা লাফ দিয়া উইঠা যাই। ‘বঙ্গবন্ধু আমারে ডাকে মহিউদ্দীন দরজা খোল। আমি আইছি।’ আমার সহধর্মিণী আমার সঙ্গে ঘুমায়, ওনারে জিজ্ঞাসা করেন।

Mujib

তিনি বলেন, কামাল বঙ্গবন্ধুর রক্তের না? বঙ্গবন্ধু হইলো রাজা। কামাল কি রাজপুত্র না? আমরা কি তার গোলাম না? আমরা যারা ওনার সেবা করতাম, আমরা সবাই তো ওনার গোলামই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর যে আদর করত। তাতে কামাল কে, মহিউদ্দীন কে কোনো তফাৎ ছিল না। আমাদের দুই চোখে কোনোদিন দেখত না।

কামাল হইল রাজপুত্র। আমরা হইলাম চাকরবাকর। কিন্তু রাজপুত্র আর চাকরবাকরের বিভাজন বঙ্গবন্ধুর আচরণে দেখা যায় নাই। মাপা যায় নাই। মাপা গেছে আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর ছেলে। কামালও পোলা, আমিও পোলা। ওনার আচরণে এইটাই বলতো।

বঙ্গবন্ধু দুধের সর খুব ভালোবাসতেন। তাই বঙ্গমাতা নিজে গাই বাইন্ধা দুধের সর বানাইতো। একদিন বঙ্গবন্ধু তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাইতে বইছে। কামাল, জামাল, রাসেল, রেহানা খাইতে বসছে। আমি পেছনের বারান্দায় দাঁড়াইয়া আছি। ওনার অপেক্ষা করতাছি। কখন ওনার খাওয়া শেষ হবে। আর প্রতিদিনের মতো ওনাকে নিয়ে যাব, হাত-পা টিপা ঘুম পারামু। তখন বঙ্গবন্ধু আমারে ডাক দিল। ওই তুই খা। তিনি জানে, আমি একটু খাইটাই বেশি। তখনও উনি দেখেন আমি বারান্দায় দাঁড়াইয়া রইছি। উনি আবার ডাক দিয়া বললেন, ওই তুই আয় বস, খাইতে বস। তখন আমি দেখলাম সবাই টেবিলে বসা। আমি তখন টেবিলের সবাইরে শেষে এক কোনাতে বসছি। বঙ্গবন্ধু সব খাইছে, লইছে। এবং খাওয়া-দাওয়া শেষে দুধের সর, সেটাও খাইছে।

কেন বললাম কথাটা! কামাল বইছে। রেহানা বইছে। জামাল বইছে। রাসেল তো বাচ্চা শিশু আদরের সর্বজন স্বীকৃত। সেও বইছে। বঙ্গমাতাও বসা। বঙ্গবন্ধুর খাওয়া-দাওয়া শেষ। বেসিনে হাত ধুইয়ে দুধের সর কিছুটা খেয়ে। আমাকে ডেকে বললেন, ওই তুই এইটা খাইছ।

তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, দেখেন আমি তো গোলাম। এইখানে সবাই বসা। তারপরও আমাকেই তার রাখা সরটা খেয়ে যেতে বললেন। রাসেল, কামাল সবাই তো বসা। আমি সেই দূরে বসা। তারপরও আমাকে খেতে বললেন। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা সবসময়ই তাদের সন্তানের মতো আমাকে ভালোবাসতো। দুর্ভাগ্য ভালোবাসার মানুষটার জন্য কিছুই করতে পারলাম না।

প্রতিনিধি/এসএস