images

সারাদেশ

‘হামাকে মতন গরিব মানষের দিন শ্যাষ’

জেলা প্রতিনিধি

০৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৩ এএম

বাজারত অ্যাসে মুরগির দাম শুনে মাথা ঘুরিচ্ছে। যে কয়টা টাকা নিয়ে আসনু মুরগি কিনতেই তো টাকা শ্যাষ হবে। তেল ও মসলাসহ আর জিনিস কিনমু কিভাবে। হামাকে মতন গরিব মানষের দিন শ্যাষ।

আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন ‍নওগাঁর মর্জিনা বেগম। তার বাড়িতে জামাই-মেয়ে ও বোন বেড়াতে এসেছে। এইজন্য কিছু বাজার করতে এসেছেন বাজারে। সোনালী মুরগির দোকনের সামনে দাঁড়িয়ে দাম শুনছিলেন।

এসময় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এখন সংসারে হামি আর হামার স্বামীর থাকি। স্বামী অসুস্থ তাই কোনো কাজ করতে পারে না। হামি মানষের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকম সংসার চালাই। বাড়িতে মেয়ে-জামাই ও বোন বেড়াতে আসছে। তাই ভাবলাম বাজার থ্যাকা মুরগি ও অন্যকিছু কিনা নেয়ে আসি। কিন্তু যে দাম, তাতে কি কিনমো এই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি।

naogaon

নওগাঁয় নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমশই লাগামহীন হয়ে পড়ছে। দিনের পর দিন বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের হিসেব মিলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ। কেবল নিম্নবিত্ত নয় কুলে উঠতে পারছেন না মধ্যবিত্তরাও।

এদিকে, সামনে রমজান আসছে। অথচ বাজার অস্থির হয়ে আছে। দেশের একটি নিয়ম হয়ে গেছে, রমজান আসলেই মূল্য বেড়ে যায়। কেন বাড়ে, কারা বাড়ায় এটা দেখ ভাল করার কেউ নেই। একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে আর কমতে চায় না, এটা যেন স্বাভাবিক নিয়মে দাঁড়িয়েছে। তাই বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের কাছে বাজার মনিটরিং জোরদারের দাবি সাধারণ মানুষের।

naogaon

সোমবার (৬ মার্চ) নওগাঁ পৌর শহরের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন ১১০ টাকা, আদা দেশি ১৪০ টাকা ও ইন্ডিয়ান ১১০, সাজিনা ১৬০, বেগুন ৪০ টাকা, করলা ১০০, পটল ৮০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০, ঢেঁড়স ১০০,  কাঁচামরিচ ১০০, লাউ প্রতি পিস ৩০, কপি প্রতি পিস ৩৫ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, হলুদ ২০০ টাকা, জিরা ৬৫০ টাকা, চিনি ১১৫ টাকা, মসুর দেশি ১৪০ ও ইন্ডিয়ান ১০০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, সয়াবিন ১৮৫ টাকা, সরিষার তেল ২১০ টাকা, খেসারী ৯০ টাকা, আটা ৬৫ টাকা, ময়দা ৭৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বয়লার মুরগি ২৩০ টাকা, সোনালী ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজিতে। লাল মুরগির ডিম প্রতিপিস ১১ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি।

naogaon

মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, টেংরা মাছ ৫৫০ টাকা, পাবদা ৩০০ টাকা, সিলভার কার্প ২-৩ কেজি ওজনের ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, কাতল ছোট ২৫০ ও বড় ৩৮০ টাকা, পাঙ্গাস বড় ২০০ টাকা, শিং মাছ ৫৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৬০০, ছোট বোয়াল ৫০০ টাকা ও বড় বোয়াল ৮০০ টাকা, রুই ২৫০-২৮০ টাকা, ৮শ-৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

পৌর খুচরা বাজারে বেলা ১২টার দিকে রিকশা চালক সাইদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। এসময় তিনি জানান, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ পাঁচজনের সংসার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ৭শ থেকে ৮শ টাকা ইনকাম হয়। বাজারে সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়েছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না, আমরা বাঁচব কী করে।

naogaon

মাছ বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের হাসি-কান্না অনেকটাই নির্ভর করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর। দাম কম থাকলে পেটভরে দুমুঠো খাওয়া যায়। দাম লাগামছাড়া হলে অনেক সময় না খেয়ে কাটাতে হয়। যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে মাছ কিছুদিন আগে ২১০ টাকা কেজিতে নিয়েছিলাম সেই মাছ আজকে ২৪০ টাকা কেজি চায়। তাই বাধ্য হয়ে যেখানে একটু বেশি কিনতাম সেখানে পরিমাণে কম কিনবো।

তৌকির হোসেন (ছোট পোস্টে) সরকারি চাকরি করেন। মাছ বাজারে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের মতো হিসেব করে চলা মানুষ আর গরুর মাংস খেতে পারবে না। কমদামে ব্রয়লারও এখন ২৩০ টাকা কেজি। মাছের দামও বেড়েছে। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে, অন্য খরচে টান পড়ছে।

নওগাঁ শহরে মেসে থেকে পড়াশোনা করেন আল-আমিন হোসেন। তিনি বলেন, আগে ২ হাজার থেকে ২২শ টাকা হলে থাকা খাওয়া হয়ে যেত। এখন ৪ হাজার টাকা দিয়েও হয় না। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো রকম টিউশনি করে পড়াশোনা ও মেসের খরচ চালাই। এখন দেখতেছে টিউশনি করে পড়াশোনা ও মেসে থাকা কষ্টকর কর হয়ে যাচ্ছে।

naogaon

মুরগি কিনতে এসেছেন আব্দুস সালাম নামে এক আবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি বলেন, সোনালী মুরগি কিনলাম ৩২০ টাকা কেজি হিসেবে। দাম বেশি নিল মুরগির। আমাদের মত মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে কিনে খাওয়া খুব কষ্টকর। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, না হলে রমজানের মধ্যে আরও দাম বৃদ্ধি পাবে।

জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সরংক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক রুবেল আহমেদ বলেন, আমরা সপ্তাহে ৫ দিন বাজার মনিটরিং করে থাকি। যেন কোনো বিক্রেতা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য না নেয়। বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতেই এই অভিযান চালানো হয়ে থাকে। সামনে রমজান আসছে। আমাদের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং আরও বেশি নজরদারিতে রাখা হবে।

টিবি