images

সারাদেশ

সিরাজগঞ্জে ৩ দিনব্যাপী খাজা ইউনুস আলী ওরশ শুরু মঙ্গলবার

জেলা প্রতিনিধি

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:২৯ পিএম

উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক, ওলিয়ে কামেল সিরাজগঞ্জের হযরত শাহ সুফি খাজা বাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রঃ) এর ১০৮তম ওরশ শরীফ মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হবে।

৩ দিনব্যাপী এ ওরশ উপলক্ষে এনায়েতপুর থানার ৫০টি গ্রামে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি।

ওরশের ১০৮তম ঐতিহ্যের মেলাকে ঘিরেও আগ্রহ যমুনা পাড়ের টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলাবাসীর। ঈদের পরেই এলাকায় স্থান পাওয়া সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চলছে সবাই। তাই সবার মাঝেই রয়েছে উৎসাহ উদ্দীপনা।

জানা যায়, খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রঃ) মুলত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বংশধর। ইসলামের শান্তির বাণী প্রচারের জন্য ইয়েমেন থেকে তাদের বাংলায় আসেন। এরপর তিনি ভারতের প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক খাজা সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর সংস্পর্শে আসেন। শান্তি ও আদর্শের পথে ইসলাম প্রচারে ভোগ বিলাসী জীবনের বিরোধী এই মহামানব ইসলাম ও সুফীবাদের দর্শন ভারতের আসামসহ সারা বাংলায় প্রচারে ২৪ লাখ মুরিদ ও খেলাফত প্রাপ্ত ৫৬ জন খলিফাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে খেতাব পান। কিছুদিন অতিবাহিত হলে নিজ ভুম সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে খানকা স্থাপন করে শুরু করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শান্তির তরিকা এবং আদর্শের সুফী বাদের প্রচার।

১৯১৬ সালে এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে তার পীর খাজা সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদী বাগী (রঃ) এর নির্দেশে অনুসারী নিয়ে ধর্মীয় ঝিকির-আজগার, আলোচনা, হামদ-নাত, গজল পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে ইসলামের আদর্শে জীবন পরিচালনার আহ্বানে ওরশ মোবারক শুরু হয়। তার মানবিক কল্যাণকর কাজ সবার মাঝে দৃষ্টি কাড়লে দেশের সব জায়গা ও ভারতের আসাম পর্যন্ত সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে সম্মিলিত উদ্যোগে, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রতি বছরই তার দেশ-বিদেশের অনুসারী লাখ-লাখ জাকের নারী-পুরুষ ভক্তদের অংশগ্রহণ এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে বাৎসরিক ওরশের মাধ্যমে দেশের বৃহৎ ধর্মীয় মহাসমাবেশ হয়ে আসছে।

১০৮তম এই বাৎসরিক ৩ দিনব্যাপী ওরশ ও মেলা নিয়ে জেলাবাসীর রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। উৎসবের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিতে খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের সয়দাবাদ মোড়, বেলকুচির চালা, এনায়েতপুর কেজির মোড়, মন্ডলপাড়া মোড়, খাজা ইউনুছ আলী কলেজ ও হাসপাতাল গেইটে সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন তোরণ স্থাপনের পাশাপাশি এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ সড়কের এনায়েতপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে হাসপাতাল হয়ে মাজার ও এনায়েতপুর পুরাতন বাজার হয়ে কেজির মোড় পর্যন্ত সড়ক এবং এনায়েতপুর স্পার বাধ রাস্তার উপরে বাঁশ টাঙ্গিয়ে পুরো এলাকায় লাল-সবুজ, নীল, সাদা, সোনালীসহ নানা রঙের বাহারি আলোকসজ্জার কাজ চলছে।

Sirajgonj

ওরশ উপলক্ষে এনায়েতপুর থানার ৫টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে চলছে এখন উৎসবের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যেই সকল আত্মীয়-স্বজনদের নায়রে আনতে দাওয়াত করা হয়েছে। কেউ ওরশ শরীফের আগের দিন কেউবা আবার শুরুর দিন এলাকার স্বজনদের বাড়িতে আসবেন। ওরশ শরীফে মাজার জিয়ারত, ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয়াসহ ঐতিহ্যের বিশাল মেলায় দলবলে কেনা-কাটা করেন। পাশাপাশি তাদের আতিথিয়েতায় টানা কয়েকদিন বাড়িতে থাকে খেজুরের রসের গুড়ের পিঠা-পুলি, পায়েসসহ বাহারি খাবারের আয়োজন। এছাড়া দরবারের সুস্বাদু তবারকের স্বাদ নেওয়াও এই উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। ওরশ শরীফের এই আয়োজন বহুকাল ধরে দৃঢ় করে রাখছে মুসলিম-হিন্দুসহ সব মানুষের অনন্য সম্প্রীতির বন্ধন।

এ ব্যাপারে এনায়েতপুর গ্রামের প্রবীন সমাজসেবক আহম্মদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সোলেমান হোসেন মাস্টার ও খোকশাবাড়ি গ্রামের কালিপদ সরকার  বলেন, শত বছরের আমাদের প্রাচীন উৎসব হচ্ছে ওরশ শরীফ। যে যার যার মতো পারি আমরা ওরশ শরীফ সফল করতে কাজ করি। পাশাপাশি এ ধর্মীয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আদিকাল হতেই আমাদের বাড়িতে দূর-দূরান্তের আত্বীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে থাকি। তারা দরবার শরীফে আসা ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষের সম্প্রীতির বন্ধনে আলিঙ্গন করেন।

পাশাপাশি নানা পসরার গ্রামীণ মেলায় কেনাকাটা করে উৎসবে মাতেন। এজন্য দরবারে যেমন তাদের গরু-খাসি, মাছ, ডাল-সবজির অমৃত তবারক খাইয়ে আপ্যায়িত করা হয়। তেমনি বাড়িতেও থাকে পিঠা পুলির আয়োজন। এ এক অন্যরকম আত্বিক উৎসব। মাস খানেক আগে থেকেই ধনী-গরীব প্রতিটি মানুষ এজন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।

এদিকে এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষের আলহাজ্ব হামিদুল হক, পেশ ইমাম আলহাজ্ব মাও. আব্দুল আওয়াল ও মোজাদ্দেদীয়া আনসার কমান্ডার আনিসুর রহমান বলেন, খাজা পীর এনায়েতপুরী (রঃ) ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে অহিংসাপরায়ণ শান্তির বিশ্ব দেখতে সত্যিকারের ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে গেছেন। তিনি ইসলামের আদর্শে মানবতার দর্শন নিয়ে সকলকে জীবন গড়ার পথ দেখিয়েছেন। তাই তার ওরশ শরীফকে মহা পবিত্র উৎসব আয়োজন মনে করি আমরা। প্রতিবার এই মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে আমরা নতুন আলোর পথ খুঁজে পাই।

তারা আরও বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশ বিদেশের প্রায় ১০ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আগম হবে। আগামী বৃহস্পতিবার সকালে দরবারের গদ্দিনসীন হুজুরপাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়ার পরিচালনায় বিশ্ব মানবতার মঙ্গল কামনা করে ওরশ শরীফের সমাপ্তি হবে।

প্রতিনিধি/এসএস