জেলা প্রতিনিধি
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৩ এএম
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবদুস সালাম, সালাম নামে পরিচিত তিনি। সালামের গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষ্মণপুর (বর্তমানে সালাম নগর) গ্রামে। গ্রামটি প্রান্তিক জনপদে হওয়ায় সারা বছর কেউ সালামের পরিবার ও এলাকার খোঁজ রাখে না।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই কদর বাড়ে এ গ্রামের। তখন গ্রামটিতে পা রাখেন দেশের বিশিষ্টজন, গণমাধ্যমকর্মী ও প্রশাসনিক কর্তারা।
ভাষা শহীদ সালামের নামে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হলেও সেখানে বছরজুড়ে থাকে সুনসান নীরবতা। ভাষা শহীদ সালাম সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে জানাতে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তিকরণ, গ্রামের বাড়ির সামনে উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন, তোরণ নির্মাণ, গ্রন্থাগারে নতুন নতুন বই সংযোজন এবং একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া সর্বস্তরে ভাষা বাংলা চালু করার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর লক্ষ্মণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভাষা শহীদ আবদুস সালাম। বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলনে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন তিনি। সেখানে গুলিবিদ্ধ হন আবদুস সালাম। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করলে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরিবার ও স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পর ২০১৭ সালে আজিমপুর কবরস্থানে আবদুস সালামের কবর শনাক্ত করা হয়।
ভাষা শহীদ আবদুস সালামকে স্মরণীয় করে রাখতে তার গ্রামের বাড়ি লক্ষণপুরের নাম পরিবর্তন করে সেটিকে ‘সালাম নগর’ করা হয়েছে। সালামের বাড়ির সামনে লক্ষণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে। ২০০০ সালে ফেনীতে ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়। ২০০৭ সালে দাগনভূঞা উপজেলা অডিটরিয়ামের নামকরণ করা হয় ভাষা শহীদ সালাম মিলনায়তন।
২০০৮ সালে সালামের বাড়িতে নির্মাণ করা হয় ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের নাম করা হয় ভাষা শহীদ আবদুস সালাম। কাশেম-গোল আরা-রাকিন কল্যাণ ট্রাস্টের স্বত্তাধিকারী আবুল কায়েশ রিপন ২০১৭ সালে সালামের গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ভাষা শহীদ সালাম মেমোরিয়াল কলেজ। এছাড়াও সালামকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজের নামকরণ করা হয় বানৌজা সালাম। সরকারের পক্ষ থেকে ২০০০ সালে ভাষা শহীদ সালামকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়।
সরেজমিনে ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি পাঠাগার ও জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, গ্রন্থাগারের আলমিরাতে হাজার হাজার বই সাজানো আছে। অত্যন্ত পরিপাটি এ গ্রন্থাগারে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও কোনো পাঠকের দেখা পাওয়া যায়নি। লাইব্রেরিয়ান লুৎফর রহমান বাবলু জানান, গ্রন্থাগারে সাড়ে ৩ হাজার বই রয়েছে। প্রায় সবই পুরাতন। বছরজুড়ে গ্রন্থাগারটি পাঠকের জন্য খোলা রাখা হলেও পাঠকের আনাগোনা কম।
শহীদ আবদুস সালামের ভাতিজা নুরে আলম জানান, জাদুঘরের পাশেই ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক। এ সড়কের পাশে ভাষা শহীদ আবদুস সালামের নামে একটি তোরণ নির্মাণ করা হলে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও আবদুস সালামের নাম আরও বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শহীদ সালামের ভাগিনা মো. হানিফ বলেন, মামার নামে এ গ্রামের নাম সালাম নগর করা হয়েছে। কিন্তু সারা বছর এখানে কেউ আসে না। শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি এলেই সবাই আমাদের খোঁজেন, কর্মসূচি পালন করেন। এখানে বিনোদন পার্ক ও উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তাহলে একদিকে এ গ্রামের সাথে জনসম্পৃক্ততা বাড়বে, অন্যদিকে গ্রন্থাগারে পাঠকের শূন্যতাও পূরণ হবে। মানুষ ভাষা আন্দোলন ও শহীদ সালামকে জানার সুযোগ পাবে।
ভাষা শহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, ভাষা আন্দোলনের গৌরবগাঁথা ও ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সালামদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা দেশের সর্বস্তরে চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে। সালাম নগরে বছরজুড়ে জনসমাগম নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, ভাষা শহীদ সালামের গ্রামের সাথে আমাদের আগামী প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এইচই