বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৫ পিএম
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৭০। চল্লিশ হাজারের বেশি প্রাণের চাঞ্চল্যে গমগম করে ওঠা এ বিদ্যাপীঠ কেবল পঠনে সীমাবদ্ধ থাকেনি, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংগ্রামে বুক পেতে দিয়ে এগিয়ে চলছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ মতিহার চত্বরে লাগানো ব্যানার, সাইনবোর্ডে কেমন আছে রক্ত আর ত্যাগে অর্জিত বাংলা ভাষার বর্ণমালা।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক পার হয়ে গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল একটি সতর্কমূলক বার্তা। তাতে লেখা আছে—'পোষ্টার লাগাবেননা'। দুইটি শব্দ দ্বারা রচিত হয়েছে এই বাক্যটি। কিন্তু দুটিতেই যে আছে মারাত্মক ভুল। ইংরেজি বা বিদেশি শব্দে ‘ষ’ ব্যবহৃত না হলেও এখানে পোস্টার বানানে 'ষ' ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে 'না' শব্দটি আলাদা বসার নিয়ম থাকলেও এখানে 'লাগাবেন' শব্দটির সঙ্গে সেঁটে বসেছে। তার পাশে আর একটি ব্যানারে 'ব্যতিত' শব্দটিকে বিকৃতি করে লেখা হয়েছে 'ব্যাতীত'।
পাশের আরেকটি পোস্টারে লেখা হয়েছে 'ক্যাম্পাসে অটো প্রবেশ নিষেধ'। এখানে 'নিষেধ' শব্দটি পুরাতন অভিধান অনুযায়ী ভুল। তবে কতিপয় আধুনিক অভিধান ‘নিষেধ’ শব্দটিকে যুগপৎ বিশেষ্য ও বিশেষণ নির্দেশ করলেও অনেক বিশেষজ্ঞ সেটা মানতে নারাজ। তাঁরা বলেন, বাংলা একাডেমি এটাকে সমর্থন করলেও আসলেই তা ঠিক নয়। 'নিষিদ্ধ'ই ঠিক।

এরপর মূল ফটকের পূর্বপাশে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যালয়। সেখানে রেজিস্ট্রেশনকে সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়েছে 'রেজিঃ'। কিন্তু হওয়ার কথা 'রেজি.'।
সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ারের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক প্রদান উপলক্ষ্যে প্রশাসন কর্তৃক সাঁটানো হয়েছে একটি ব্যানার। এখানে 'কৃতী' বানানটাই ভুল। লেখা হয়েছে 'কৃর্তী'।
এরপর জোহা চত্বরে লেখা হয়েছে 'মাজার চত্ত্বরে বসা নিষেধ'। এখানে 'চত্ত্বর' শব্দটি ভুল। শব্দটির প্রমিত বানান 'চত্বর'। চত্বরটির চারপাশে চারটি ব্যানার আছে। চারটিতেই চত্বর বানানটি ভুল লেখা হয়েছে।
এবার নজর দেওয়া হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের আশেপাশে। ভবনের পশ্চিম পাশে স্থাপন করা হয়েছে মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনার ডিজিটাল ঘড়ি। সেখানে বৃহস্পতিবারের জায়গায় লেখা হয়েছে 'বৃহষ্পতিবার'।

তার ঠিক নিচে লেখা হয়েছে 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা'। এখানেও রয়েছে ভুল। 'এর' শব্দটি সবসময় সেঁটে বসবে। সেখানে 'উদযাপন' বানানটাও ভুল। দ শব্দটির পরে একটি হস্ চিহ্ন হবে। পাশেই একটি ব্যানারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির একটি উক্তি লেখা হয়েছে। উক্তিটি হলো ' বাংলাদেশ ডিজিটাল রুপান্তরের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ'। এখানে 'রুপান্তর' শব্দটি ভুল। প্রমিত বানান হবে 'রূপান্তর'।
এরপর প্রতিবেদকের লক্ষ্য প্যারিস রোড। প্যারিস রোডের পাশে একটি ব্যানারে উপলক্ষ্য বানানকে বিকৃত করে লেখা হয়েছে উপলক্ষ। আরেকটু সামনে গেলেই দেখা মিললো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর দিকনির্দেশনামূলক একটি মানচিত্র। সেখানে 'একাডেমিক' বানানটি ভুল। আট জায়গায় লেখা হয়েছে এই বানানটি।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যদি মৌলিক বানানগুলো ভুল করে তাহলে বড়ই দুঃখজনক। বাংলা বানানের ভুল ব্যবহার ভাষা এবং শহীদদের প্রতি চরম উদাসীনতা। বাংলা বানানের এমন ভুলের জন্য আমাদের সকলের আন্তরিকতার বড়ই অভাব। সকলকে বাংলা বানানের বিষয়ে আরোও বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টা আসলেই দুঃখজনক। যে ভাষার জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছি সেই ভাষাই যদি আমরা ভুল লিখি তাহলে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা সত্য ভুলের ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই। আমাদের সকলকেই বাংলা ভাষার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী হতে হবে। যে ভাষায় আমাদের পরিচিতি এবং বিশ্বে গৌরব এনে দিয়েছে সে ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই আমাদের সকলের জন্য মঙ্গলজনক।
ভুল করা বানানগুলো সংশোধন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব ভুল বানানগুলো সংশোধন করার।
প্রতিনিধি/এইচই