images

সারাদেশ

'আমার বুকের ধন চলে গেছে আমি কি নিয়া বাঁচবো'

জেলা প্রতিনিধি

২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৩১ পিএম

‘আমার শিশু সন্তান আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে। আমি মা হিসেবে এটা কিভাবে মেনে নিবো। আমার বুক খালি হয়ে গেছে। আমার বুকের ধন চলে গেছে আমি কি নিয়া বাঁচবো’—কথাগুলো এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ৮ বছরের শিশু হুজাইফার মা রোজিনা বেগম।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে বাদ জোহর নিহত দুই শিশুর আত্মার শান্তি কামনায় তাদের বাড়িতে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি রাজবাড়ী জেলার কালুখালীতে গ্যাস লাইটার নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে খেলার সময়ে পুরো ঘরে আগুন লাগিয়ে নিজেদের শরীরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হুজাইফা (৮) ও হাসান (৪) নামে দুই শিশুর নির্মম মৃত্যু হয়েছে। 

ওইদিন সন্ধ্যায় রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাজী পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
শিশু দুইজন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।

পরদিন (২০ জানুয়ারি) দুপুরে নিহত দুই শিশুর লাশ স্থানীয় কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে। এক সঙ্গে দুই শিশুর মৃত্যুতে এখনও গ্রামের সকলের চোখে মুখে শোকের ছায়া।

গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাজী পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 
নিহত হুজাইফা (৮) এই গ্রামের বাবু বিশ্বাসের ছেলে ও হাসান (৪) একরাম সেখের ছেলে। নিহত হুজাইফা স্থানীয় মাজবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিলো।

অগ্নিদগ্ধ নিহত শিশু হাসানের মা বিলকিস বেগম বলেন, হাসান ও হুজাইফা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে খেলা করছিল। খেলতে খেলতে কখন যেন তারা রান্নাঘরে গিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। হঠাৎ করে দেখি পুরো রান্নাঘরে আগুন লেগেছে। এলাকার সবাই আগুন নেভানোর জন্য ছুটে আসলে ভেতরে দেখা যায় হাসান ও উদাইফা শরীরে আগুন লেগে রান্নাঘরের ভেতরে আটকা পড়েছে।

নিহত হুজাইফার মা রোজিনা বেগম বলেন, আমার শিশু সন্তান আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে। আমি মা হিসেবে কিভাবে এটা মেনে নিবো। আমার বুক খালি হয়ে গেছে। আর যেন কোনো বাবা মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।

নিহত শিশু হুজাইফার বাবা ইকরাম মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার একটু আগে শিশু হুজাইফা, হাসান, সাব্বির ও ফাহিম গ্যাস লাইট নিয়ে রান্না ঘরে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছিল। হঠাৎ আগুন দেখে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসে। সকলের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

নিহত অন্য শিশু হাসানের বাবা বাবু বিশ্বাস বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে আমরা ছয়মাস যাবত গ্যাস কিনি নাই। যে কারণে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগায় কথাটি মিথ্যা। ওই চার শিশুই আগুন জ্বালিয়েছে। প্রথমে ওরা নিজেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর দেখা যায় শিশু হুজাইফা ও হাসান মৃত্যু প্রায় অবস্থায় ঘরের বেড়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয় গ্রামবাসী কাজী ওসমানী বলেন, জানা গেছে শিশুরা গ্যাস লাইটার নিয়ে রান্না ঘরে খেলতে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভয়ে তারা রান্নাঘরে আটকে থাকে। শিশুদের শরীরে আগুন লেগে তারা গুরতর আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজবাড়ী সরদর হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। সেখানে একটি শিশু মারা যায় ও আরেকটি শিশুকে ঢাকাতে নেওয়ার পথে মারা যায়।

আরেক গ্রামবাসী মো. মতিউর রহমান বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় কবরস্থানে শিশু দুটির লাশ পাশাপাশি কবে দাফন করা হয়। শিশু দুই জন সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। এমন একটি ঘটনায় পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা সবাই শোকাহত।

হাফেজ মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা আল্লাহর দরবারে নিষ্পাপ এই দুই শিশুর জন্য দোয়া করি আল্লাহ তাদেরকে বেহেস্ত নছিব করুন। 

কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুমুর রহমান বলেন, শিশুরা নিজেরাই আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাদের বাবা মা ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। নিহত দুই শিশুর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। আল্লাহ তাদের বেহেস্তবাসী করুন।

কালুখালী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সুবোধ কুমার বর্মন বলেন, ঘটনার পর নিহত দুই শিশুর সুরতহাল রিপোর্ট শেষে কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান জানান, ঘটনাটি অনেক দুঃখজনক। শোকাহত পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই।

প্রতিনিধি/এইচই