images

সারাদেশ

'মাওর জন্য শাক ব্যাচোং মুই'

জেলা প্রতিনিধি

১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:০১ পিএম

শুধুমাত্র মাওর (মায়ের) জন্য শাক ব্যাচোং মুই। মাও না থাকলে চোক দুইটা যেদিকে যায় মুই সেদিকে গেনু হয়। মাও যতদিন বাঁচি আচে ততদিন মুইও শাক ব্যাচাইম শহরে। তারপর কি হইবে মুই জানোং না। কথাগুলো বলছিলেন রাধা রানী।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ধামুর এলাকায় রাধা রানীর (৩২) বাড়ি। হালকা পাতলা গড়নের রাধা রানী অভাব-অনটনের জীবন হলেও মুখে হাসি লেগেই থাকে।

১৪ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন রানী। তবে স্বামীর সঙ্গে মাত্র আট দিনের সংসার হয়েছে। স্বামী মাদকাসক্ত হওয়ায় সেই সংসার টেকেনি তার। এরপর আর বিয়ে করেননি রাধা। শাক বিক্রি করে এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কথা হয় ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের সঙ্গে। এসময় রাধা রানী বলেন, শুধুমাত্র মাওর (মায়ের) জন্য শাক ব্যাচোং মুই। মাও না থাকলে চোক দুইটা যেদিকে যায় মুই সেদিকে গেনু হয়। মাও যতদিন বাঁচি আচে ততদিন মুইও শাক ব্যাচাইম শহরে। তারপর কি হইবে মুই জানোং না।

Rangpur

রাধা রানীর দেখা মেলে সন্ধ্যার পরপরই নগরীর সুপার মার্কেট ও ভাঙ্গা মসজিদের পাশে রাস্তার ধারে। তিনি প্রতিদিনি আসেন ১২ কিলোমিটার দূরের গঙ্গাচড়া থেকে। বাড়ি গঙ্গাচড়া উপজেলার ধামুর এলাকায়।

সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত শহরে শাক বিক্রি করেন তিনি। এরপর একাই অটোরিকশায় চড়ে বাড়িতে ফেরেন। রাধা রানীকে সন্ধ্যার সবজি বাজারে যারা সবজি কিনে থাকেন, তারা সবাই তাকে চেনেন। ভ্যানে করে কচু শাক, কাট কচু (বাস্পোর কচু) ও কচুর লতি বিক্রি করেন তিনি।

শুক্র ও শনিবার ছাড়া পাঁচ দিনই সন্ধ্যার পর শাক বিক্রি করেন রানী। শাক বিক্রি করে প্রতিদিন আয় রোজগার হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আবার কোনো কোনো দিন বেশিও হয়। এই টাকা দিয়ে চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য কিনে থাকেন তিনি। তবে বেশি টাকা ব্যয় হয় মায়ের চিকিৎসায়। মাকে খাওয়াতে আর ভালো রাখতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে।

রাধা রানীর যখন বয়স মাত্র ১৯ দিন। তখন বাবা তিস্তা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। রাধা রানীর আর কোনো ভাইবোন নেই। অনেক কষ্টে মা তাকে বড় করেছেন। তাই মায়ের জন্য একাই ছেলে মেয়ের কাজ করেন তিনি।

কথা হয় শাক ক্রেতা হুমায়ুন কবীরের সাথে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, রানীর থেকে প্রায়দিন শাক কেনা হয়। খুব দুঃখী মহিলা। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না। তবে অনেকের মুখে শুনেছি তার একুলে মা ছাড়া কেউ নাই।

নিয়মিত শাক ক্রেতা লতিফুর রহমান বলেন, রাতে ব্যবসা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে প্রায়দিন রাধা রানীর কাছে কচু শাক কেনা হয়। সে দাম বেশি নেয় না। শাকগুলো পরিষ্কার থাকে।

পাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানদার সাজু বলেন, উনি আসলে আমরা সবাই সহযোগিতা করি। ওনার করি উনি খায়। কারও উপর নির্ভরশীল না। আর নিজের কাজ নিজে করে এতে লজ্জার কিছু নাই।

রাধা রানী ঢাকা মেইলকে বলেন, আগত সন্ধ্যার পরপরই দোকানধরা যাইতো। এলা পুলিশ সন্ধ্যার পর বইসপার দেয় না। বইসপার দেরি হইলে শাক ব্যাচতে ব্যাচতে দেরি হয়। বাড়ি যাইতে যাইতে রাইত ১২ থেকে ১টা বাজে। কষ্ট হয়। তাও কষ্ট দুর হয় যখন মাওক দেকি। মাও না থাকলে মোর দুইচোক যেদিকে যায় সেদিকে গেনু হয়। কিন্তু মাওর জন্য যাবার পাওনাই। সংসার হয় নাই। ম্যালা বিয়ার ঘর আইসে। আর হবার নয়। এ্যালা মোর চিন্তা মাও কেমন করি ভালো থাকে।

প্রতিনিধি/এসএস