জেলা প্রতিনিধি
১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৯ এএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার আম বাগানগুলোতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
বছরের অধিকাংশ সময় বাগানের পড়ে থাকা অনাবাদি জমিগুলোতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। বাগানের পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে প্রতি বিঘায় গড়ে ৫০ হাজার টাকা লাভ করছেন চাষিরা। এই অভিনব পদ্ধতিতে মিষ্টি কুমড়া চাষে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ থাকায় দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি দফতরের তথ্য মতে, ভোলাহাট উপজেলায় এই মৌসুমে ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর আম বাগানের মধ্যে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে এবার মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ হচ্ছে। যা গত বছর ছিল মাত্র ৪০ হেক্টর। বাগানের পতিত জায়গায় মিষ্টি কুমড়া চাষে বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মণ ফলন পাওয়া যায়।
আম বাগানের অনাবাদি জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষি জামাল মোড়ল ঢাকা মেইলকে বলেন, বাগানে বছরে মাত্র একবারই আমের ফলন হয়। অসময়ে বাগানের জমিগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। এবার ২০ বিঘা পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এই জমিতেই মৌসুমে বাগান থেকে আম আর মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে। আগামী বছরে আমি আরও কিছু আম বাগানে প্রজেক্ট হিসেবে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বাড়াব।
হাসান আলী নামে আরেক আম বাগান মালিক ঢাকা মেইলকে বলেন, গত বছরে মাত্র কয়েক বিঘা আম বাগানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছিলাম। অল্প খরচ আর কম পরিশ্রম করেই বাড়তি আয় হয়েছে। এবার আমার সবটুকু আম বাগানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করছি। বাগানের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করলে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। বিক্রি করতে কোথাও যাওয়া লাগে না। সরাসরি ক্ষেত থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। সব খরচ বাদে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
পলাশ নামে আরেক কৃষক ঢাকা মেইলকে বলেন, আম বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে সব দিক দিয়ে লাভ আছে। মিষ্টি কুমড়া চাষে পোকা মাকড় থেকে রক্ষা পেতে কিটনাশক ব্যবহারে আম গাছে কম সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এতে বাগানের কোনো ক্ষতি হয় না, খরচ কম হয়। এছাড়া পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকেই মিষ্টি কুমড়া আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করি। জমি প্রস্তুত হয়ে গেলে প্রায় সপ্তাহ খানেক পরেই বীজ রোপণ করি। সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৯০ দিনের মাথায় মিষ্টি কুমড়া বাজারজাত করার মতো হয়ে যায়। ঢাকা থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা মাঠে এসে নগদ টাকা দিয়ে মাল নিয়ে চলে যায়। কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
পতিত এবং অনাবদি জমি চাষে সরকারের উদ্যোগকে সফল করতে কৃষকদের আম বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষে পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ। ফলে কৃষকদের লাভের পাশাপাশি বাগানের পরিচর্যা হচ্ছে বলে ঢাকা মেইলকে বলেন, ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী।
সুলতান আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৬০ হেক্টর বেশি জমিতে এবার মিষ্টি কুমড়ার চাষ হচ্ছে। যেসব আম বাগানগুলোতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করার সুযোগ আছে, সেখানে মিষ্টি কুমড়াসহ অনান্য আরও ফসল উৎপাদন করে প্রতি ইঞ্চি জায়গাকে কাজে লাগানোর জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগামীত ১ হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস