জেলা প্রতিনিধি
১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৭ এএম
শেরপুরের শ্রীবরদীতে হয়ে গেল ঐহিত্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা দেখতে ভিড় জমায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা কয়েক হাজার দর্শনার্থী। আনন্দিত দর্শকদের দাবি, প্রতিবছর যেন হয় এমন আয়োজন। আর আয়োজকরা বলছেন, যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করতেই এমন আয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে শ্রীবরদী পৌর এলাকার জালকাটার ষাইটকাকড়া মহল্লার আমন ধানের ফাঁকা জমিতে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
খেলায় অংশ নেয় শেরপুর, জামালপুর ও কুড়িগ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক ঘোড়া।
ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন সাংবাদিক মাসুদ হাসান বাদল। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, গ্রামীণ ঐহিত্য টিকিয়ে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা পরিচিত করতে আয়োজন করা হয় ঘোড় দৌড়। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামীতেও ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা হবে।
শীত উপেক্ষা করে নানান বয়সী মানুষ এসেছিলেন এ প্রতিযোগিতা দেখতে। কেবল বইয়ের পাতায় আর টেলিভিশনে ঘোড় দৌড় দেখলেও এবার বাস্তবে দেখার অনূভুতি ছিল অন্যরকম—বললেন শিশুকিশোররা।
ঘোড়া দৌড় দেখতে আসা ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহবুবা জাহান মৌ ঢাকা মেইলকে বলেন, বইয়ের পাতায় আমরা ঘোড়া নিয়ে নানান গল্প পড়েছি। কিন্তু বাস্তবে ঘোড় দৌড় দেখিনি। এতো দ্রুত দৌড়ায় যা চোখ ধাঁধানোর মতো।
আরেক শিক্ষার্থী ইসরাত নূপুর বলেন, টেলিভিশনে ঘোড় দৌড় দেখলেও বাস্তবে কখনো দেখিনি। আমি আজ স্কুল থেকে মাকে সঙ্গে নিয়ে এখানে এসে পড়েছি খেলা দেখতে। আমার কাছে দারুণ লেগেছে।
আধুনিকতার কারণে হারিয়ে যেতে বসা এমন গ্রামীণ খেলার আয়োজন প্রতিবছর করার দাবিও জানান দর্শনার্থীরা।
কাকিলাকুড়া গ্রামের তাসলিমা আক্তার রিমি বলেন, ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এমন আয়োজনে হাজারও দর্শকের উপস্থিতিতে আবেগ আপ্লুত হয়েছি। এ আয়োজন যেন মহামিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। সামনের বছরও এমন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছি।
ঘোড়া দৌড় দেখতে আসা আব্দুল জলিল বলেন, আমি জামালপুর থেকে ঘোড়া দৌড় দেখতে এসেছি। ঘোড়া দৌড় দেখতে আমার ভালো লাগে। ভালো লাগে তাই, শীত উপেক্ষা করে এখানে এসেছি।
শেরপুর শহরের মোবারকপুর মহল্লা হতে আসা ছানুয়ার হোসেন মনি বলেন, এখন আর আগের মতো প্রতি বছর ঘোড়া দৌড়ের আয়োজন করা হয় না। এ প্রতিযোগিতাটি উপভোগ করার জন্য আমি বিভিন্ন জায়গায় যাই। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় খেলা এ মাঠে প্রতিবছর আয়োজন করার দাবি জানাচ্ছি।
খেলায় পাঁচটি রাউন্ডে তিনজন করে বিজয়ী হয়। আর প্রথম স্থান অধিকার করে দেওয়ানগঞ্জ থেকে আসা ঘোড়ার সোয়ার কিশোর রাজু আহমেদ ও দ্বিতীয় নজরুল ইসলাম। পরে সকল বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে ফ্রিজ ও এলইডি টেলিভিশন তুলে দেওয়া হয়।
বাপ-দাদার কাছ থেকে নিয়েছেন ঘোড় দৌড়ের প্রশিক্ষণ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় তারা—ঢাকা মেইলকে জানান প্রতিযোগীরা।
প্রথম স্থান অধিকারী দেওয়ানগঞ্জ থেকে আসা ঘোড়ার সোয়ার কিশোর রাজু আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার বাপ-দাদারাও সওয়ারী ছিল। তাদের কাছ থেকে আমি শিখেছি। আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। হার-জিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এটা আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।
যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করতেই এমন আয়োজন—বললেন আয়োজক কমিটির প্রধান ও শ্রীবরদী পৌরসভার কাউন্সিলর রাকিবুল ইসলাম রাসেল।
গোলাম মোস্তাফার সভাপতিত্বে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আলহাজ্ব ইয়াকুব আলী, ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফরিদুজ্জামান, ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো, আব্দুর রউফ মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুল্লাহ তালুকদার ও যুবলীগ নেতা আব্দুল বাতেন, যুবলীগের সাবেক আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ।
প্রতিনিধি/এইচই