images

সারাদেশ

নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, মোবাইল কোর্টেই সীমাবদ্ধ প্রশাসন  

জেলা প্রতিনিধি

১৬ মার্চ ২০২২, ১১:৪২ এএম

উন্নত গুনগত মান ও দাম কম থাকায় জামালপুরের বালুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর এই সুযোগে জেলার ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এতে নদীর দু’পাশে ভাঙনসহ হুমকির মুখে পড়েছে জামালপুর- ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ঝুকিতে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র সেতু, একাধিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সড়ক-মহাসড়কসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।  

স্থানীয়দের দাবি— জেলার কয়েকটি উপজেলায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব চললেও বালুখেকোদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা। শুধু মাত্র গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে আর স্থানীয়দের চাপে মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রশাসন। তবে এরপরই আবারও বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতায় নামে বালুখেকোরা।

Illegal sand extraction

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অবৈধ বালু মহলের উপার্জিত অর্থের ভাগ-ভাটোয়ারা যায় উপর মহল পর্যন্ত। তাই প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চললেও কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। শুধু মাত্র মোবাইল কোর্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বালু উত্তোলনকারীদের দীর্ঘ মেয়াদী শাস্তির দাবিও জানান তারা।

জামালপুর পৌরসভার ছনকান্দা এলাকার কৃষক আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘বছরের পর বছর ধইরে এই ব্রহ্মপুত্র নদ থাইকে বালু তুলে। নদের দুইডে পাড় ভাইঙ্গে শেষ। কবে যে আঙ্গর ঘর বাড়ি ভাইঙ্গে যাবো গা ঠিক নাই। আমরা চাই এই বালু তোলা বন্ধ হোক।’

শরিফপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাঈল হোসেন বলেন, ‘এই বালু তোলা নিয়ে মাঝে মধ্যেই ঝগড়া বিবাদ হয়। তবুও প্রশাসনের নজর নেই। বালু ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের টাকা পাচ্ছে কিন্তু স্থানীয়রা সবসময় ভাঙন ঝুঁকিতেই থাকে।’

The administration is burning the dredger machine

একই এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া। তিনি বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট আর পুলিশ আইসে সব মেশিন পুড়াই দেওয়ার দু’তিন দিন পরই আবারও নতুন মেশিন লাগায়ে বালু তুলে প্রভাবশালীরা। এদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে আমাদের উপর আজাব সৃষ্টি হয়। এদেরকে জেলে দিলে এদের শিক্ষা হবে। তাহলেই এরা বালু তোলা বন্ধ করবে।’

বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন তো দূরের কথা এ নদের বালু মহল ইজারাও দেওয়া যাবে না।

জামালপুর সদর, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য গড়ে উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

Sand extraction from crop side  
পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের জামালপুর শাখা সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘প্রতিবার মোবাইল কোর্টে ড্রেজার মেশিন ও পাইপ ধ্বংস করা হয়। এর কিছু দিন পরই আবারও নতুন সরঞ্জামাদি লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে প্রভাবশালীরা। প্রশাসনের সাথে প্রভাবশালীদের এভাবেই চোর পুলিশ খেলা চলে। আমরা এমন খেলা চাই না। খুব দ্রুতই তদন্ত করে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলার দাবিও জানান তারা। 

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান ঢাকা মেইলকে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নির্মাণাধীন মহাসড়কের সমস্যা হচ্ছে। এর জন্য আমরা বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিন ও পাইপ ধ্বংস করে যাচ্ছি। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, যেসব উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সেইসব বালু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষি জমি বিনষ্ট করে নদী থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এইউ