images

সারাদেশ

‘১৬ ডিসেম্বর আর ২৬ মার্চই আমাগো ঈদ’ 

উপজেলা প্রতিনিধি

১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:৩৩ পিএম

সকাল গড়িয়ে দুপুর। আসছে সন্ধ্যা। রাত পোহানোর অপেক্ষা। রাত পেরোলে আগামীকাল ‘ঈদ’। তবে এই ‘ঈদ’ ভ্রাম্যমাণ ফুল বিক্রেতাদের। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ব্যস্ততা। আঁটছেন নানা পরিকল্পনাও। 

‘১৬ ডিসেম্বর’—মহান বিজয় দিবস। দিনটি উপলক্ষে তেমনই একজন ফুল বিক্রেতার দেখা মেলে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। রোজিনা বেগম নামে এই ফুল বিক্রেতা বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আর ২৬ মার্চ আইলেই আমাগো ঈদ লাগে। এই দুইদিন ম্যালা টেকার ফুল বেচতে পারি। হেই টেকা দিয়া পোলা-মাইয়া নিয়া পোলাউ মাংস রাইন্ধা খাই।’ 

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে স্মৃতিসৌধের সামনে কথা হয় রোজিনার সঙ্গে। তিনি জানান, বছর তিনেক আগে তার স্বামী তাকে রেখে অন্য জায়গায় সংসার পাতেন। সেই থেকেই দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার জীবনে লড়াই শুরু।

রোজিনা তিন সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন সাভারের কুঁড়গাও বটতলা এলাকায়। আর প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্মৃতিসৌধের সামনে ফুল বিক্রি করে পেট চালান তিনি।

বছরের বাকি দিনগুলোতে কোনোরকম বেচাবিক্রি হলেও বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে তার ফুল বিক্রির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই এই দুইদিন রোজিনার কাছে ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দময় বলে জানান। 

রোজিনার মতো একই কথা বললেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লায়লা বানু নামে আরেক ফুল বিক্রেতা। ২০ বছর বয়সে তিনি স্ট্রোক করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হোন। হারিয়ে ফেলেন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার ক্ষমতা। সেই থেকে একাই রয়ে গেছেন তিনি। 

সংসার বলতে বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়া তার কেউ নেই। ভাইরা বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন, কোনো খোঁজ-খবর নেন না তারা। বগুড়া থেকে বয়স্ক মা-বাবাকে নিয়ে আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় থাকেন তিনি। 

প্রতিদিন সকালে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে লায়লা লোকাল বাসে চড়ে ফুল বেঁচতে এসে দাঁড়ান স্মৃতিসৌধের সামনে। সারাদিন হেঁটে হেঁটে বিক্রি করেন কয়েক জাতের রঙিন ফুল। দিন শেষে ৩শ থেকে ৪শ টাকার মতো তার আয় থাকে। এই টাকা দিয়েই তার কোনোমতে সংসার চলে। তবে বিজয় দিবস উপলক্ষে তার মুখেও হাসির ঝিলিক। তিনি জানান, এই বিশেষ দিনে তার ফুল বিকিকিনির পরিমাণ ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত মাসে ২ হাজার টাকা ঘরভাড়া বাকি পড়েছে। তার আশা আগামীকালের ফুল বিক্রির টাকাতেই ঘরভাড়া শোধ করে ফেলবেন।

স্মৃতিসৌধ এলাকায় রোজিনা আর লায়লার মতো ফুল বিক্রি করেন আরও কয়েকজন রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে শিশুও আছে। স্মৃতিসৌধ থেকে ফেরার পালা, এমন সময় রায়হান নামে ৪ বছরের এক শিশু হাতে একটি লাল গোলাপ এগিয়ে বলেন, ‘ভাই কিনেন এইটা বাইত নিয়া আপারে দিয়েন।’ সে জানায়, ‘বাবায় আমাগো ভাত দেয় না, তাই ফুল বেইচ্চা মায়েরে টেকা দেই। আমার মায়ে বাসা বাড়িত কাম করে।’

বিজয় দিবস জানতে চাইলে ওই শিশুটি জানায়, এই দিন ম্যালা মাইনষে আহে স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে। হেগো মইধ্যে অনেকে আমারে ৫০-১০০ কইরা টেকা দেয় এতে আমার অনেক রোজগার হয়। 

আরেকটু এগিয়ে যেতেই চোখ পডে ফুট ওভারব্রিজের নিচের সিঁড়িতে, ওখানে বসে কচকচে কিছু কাগুজে নোট গুণছে হাসান নামে আরেক শিশু। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, টাকা দিয়ে কি করবে, লজ্জায় লাল হয়ে উঠে তার গাল দুটো। হাসান জানায়, এক সপ্তাহে ফুল বিক্রির একটি টাকাও খরচ করেনি সে। ওই টাকা জমিয়ে আগামীকাল ১৬ই ডিসেম্বর অনেকগুলো ফুল কিনবে বিক্রির জন্য। 

প্রতিনিধি/এইচই