কমলা চাষে জয়পুরহাটের ইমরান-সুমির বাজিমাত

কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে যেকোনো কাজে সফলতা পাওয়া যায়। সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন ইমরান হোসেন ও সুমি আক্তার দম্পতি। তারা এখন সফল কমলা চাষি। মাত্র ৩ বছরে পেয়েছেন অভাবনীয় সফলতা।

তাদের চাষ পদ্ধতি আর সফলতার জন্য এলাকার মানুষদের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় আদর্শ। বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার ফলচাষিরা। ফলন ভালো দেখে অনেকেই উৎসাহী হয়ে বাগান থেকে কমলার চারা কিনছেন।

জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ভিকনি গ্রামের ইমরান হোসেন উজ্জ্বল বসবাস করতেন ঢাকা'র সাভারে। উদ্যোক্তা ইমরান হোসেনের টেলিকম দোকানের ব্যবসা ছিল। করোনার সময় ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। এরপর কৃষিকাজে মনোযোগ দেন। নিজের গ্রাম জয়পুরহাটের ভিকনিতে চলে আসেন। নিজের চিন্তা থেকে এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন কয়েকটি (বারি কমলা-২) জাতের কমলার চারা।

সেই চারা থেকে গ্রাফটিং করে আরও চারা বাড়ান। এখন তার বাগানে আছে ১৩০টি কমলা গাছ। কমলাগুলো বারি-২ জাতের। ১৩০টি গাছের মধ্যে ৬০টিতে কমলা ধরেছে। প্রতিটি গাছে ১৫-৪০ কেজি পর্যন্ত কমলা ধরেছে। পাইকারি হিসেবে প্রতি কেজি কমলা ১৩০ টাকা দাম বলছেন ব্যবসায়ীরা।

উদ্যোক্তা ইমরান বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রী সুমি আক্তার এই কমলার বাগানের পরিচর্যা করি। ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রথম আমি কমলার চারা রোপণ করি। এখন পর্যন্ত ১৩০টি গাছের পেছনে আমার প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে আমার ১৩০টা গাছে কমলা ধরেছে। আশা করছি এখান থেকে কমপক্ষে ৩০ মন কমলা বিক্রি হবে। ১৫০ টাকা কেজি দরে এই সুস্বাদু মিষ্টি কমলা বিক্রি করছি। গাছের কলমের চারা বিক্রি করেছি তিন লাখ টাকার মতো।

বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় প্রতিদিন অনেক লোক আসছে আমার কমলা বাগান দেখতে। আশা করছি এ বছরই আমার সমস্ত খরচ মিটিয়ে কমপক্ষে  দুই লাখ টাকা আয় হবে। যারা বেকার যুবক আছেন তারা চাকরির পিছনে না ছুটে কমলার বাগান করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন।

ইমরানের স্ত্রী সুমি আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি ও আমার স্বামী ফল না ধরা পর্যন্ত চিন্তাই ছিলাম। কারণ আশপাশের লোকজন অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। অনেকেই বলেছেন ফল ধরবে না, ফল যদিও হয় তাহলে টক হবে। মানুষ খেতে পারবে না। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। আমরা প্রতিনিয়ত বাগানের পরিচর্যা করেছি। আল্লাহর রহমতে ভালো ফল পেয়েছি। কমলা খেতে অনেক ভালো এবং সুমিষ্ট। আমি সংসারে কাজের পাশাপাশি বাগান পরিচর্যা করি।

কমলার চারা কিনতে আসা দিনাজপুরের জাহিদ ইকবাল বলেন, আমি কমলা বাগানের বিষয়টি ফেসবুকে দেখে এখানে এসেছি। বাগানটি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। বাগানে কমলার ফলন দেখার মতো হয়েছে। আসলে বাংলাদেশের আবহাওয়াতে আমাদের অঞ্চলে এমন কমলা হবে ধারণাই ছিল না। এই কমলা খেতেও অনেক মিষ্টি। আমি এখান থেকে ৩০টি চারা কিনেছি।

আক্কেলপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইমরান হোসেন জানান, বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে খ্যাত আক্কেলপুরের গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ভিকনি গ্রামের আত্মপ্রত্যয়ী যুবক ইমরানের কমলা চাষ একটি বিপ্লব। কমলা সাইট্রাস জাতীয় ফল, এটি পাহাড়ে হয়। কিন্তু এটি এখন সমতলেও হচ্ছে। অনেক বেকার যুবক চাইলে কমলা চাষ করতে পারেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ফলবাগান সৃজন কর্মসূচির আওতায় কমলার চারা প্রদান, সার, কীটনাশক ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ এবং কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস