images

সারাদেশ

খাল খননে অর্থ নয়-ছয়!

জেলা প্রতিনিধি

০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:১৮ পিএম

প্রাণসায়ের খাল। প্রবাহিত হয়েছে সাতক্ষীরা শহরের বুকে। ময়লা-আবর্জনায় খালটি এখন মৃতপ্রায়। পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে ভর্তি। অথচ এক সময় প্রাণের সঞ্চার ছিল এখানে। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই খালকে ঘিরেই। পূরণও হয়েছিল সেই দাবি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১১ কোটি ৪ হাজার ৬৪৫ টাকা বাজেটে শুরু হয় খালটির খনন কাজ। ১০ কিলোমিটার খনন হয় তখন। অল্প কিছুদিনে আবারও পরিণত হয় ময়লার ভাগাড়ে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় আবারও খনন শুরু হয় খালটির ১৪ কিলোমিটার এলাকা। সেময় ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালে খনন শেষ হওয়ার পর এখন আবার মৃত খালটি। স্থানীয় ও টিআইবির অভিযোগ— প্রকল্প বাজেটের বেশিরভাগ অর্থই লোপাট হয়েছে। ফলে নামমাত্র খননে বারবার দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা । 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে (টিআইবি) বেইজলাইন প্রতিবেদন ২০১৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার পোল্ডার-১ এর পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পটি জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১১ কোটি ৪ হাজার ৬৪৫ টাকায় ১০ কিলোমিটার প্রাণসায়েরের খাল খনন করা শুরু হয়ে ২০১৫ সালে শেষ হয়। 

প্রকল্পটির অনিয়ম নিয়ে টিআইবি জানায়, সাতক্ষীরা পাউবো’র অধিকাংশ ঠিকাদার ইট ভাটা ব্যবসায় জড়িত। ফলে খনন কাজের মাটি খালের পাড়ে না দিয়ে নিজের ইট ভাটায় বিনা খরচে বা অন্য ইট ভাটায় বিক্রির মাধ্যমে সরকারি টাকায় নিজের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে। শহরের ইটাগাছাতে প্রকল্প কাজে ফাঁকি দিতে যন্ত্র দিয়ে খনন করা হয়েছে। খনন যন্ত্র দিয়ে শুধু খালের পাশে আগাছা কেটেছে, মাটি কাটেনি। এছাড়া উত্তর কুলিয়াতে খাল থেকে খুব সামান্য পরিমাণ মাটি কাটা হয়েছে। 

টিআইবির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. ফিরোজ উদ্দিন বলেন, সাতক্ষীরাবাসীর দাবি ছিল প্রাণসায়ের খাল প্রাণ ফিরে পাবে। কিন্তু দাবি বাস্তবায়নে প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাজেটে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই। প্রকল্পহাতে নেওয়ার সময় প্রকল্পের সুবিধা ভোগী স্থানীয়দের দাবি থাকে। সেই দাবিটা ছিল প্রাণসায়েরের প্রাণ ফিরিয়ে আনা। কিন্তু দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রকল্প ও প্রকল্পের বরাদ্দের সময় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল না। অর্থাৎ কোনো কাজকে উন্নয়নের ধারায় নিতে হলে অবশ্যই স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এই প্রকল্পে তা হয়নি। কাজটি করার সময় এর স্থায়ীত্ব দেখে পরিকল্পনা মতো করা হয়নি। 

সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, ১০ কোটি টাকায় খাল খননের নামে অর্থ অপচয় হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়েছে। প্রাণসায়ের খাল খননের ফলে নগরবাসী কোনো সুফল পেয়েছে বলে আমার মনে হয় না। খালটি খননের পরে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি, আরও একটি বিষয় হচ্ছে পানির একটা প্রবাহ সৃষ্টি হওয়ার কথা সেটাও হয়নি। এর কারণ নকশা অনুযায়ী খাল কাটা হয়নি। যেন-তেন উপায়ে কাদা তুলে পাড়ে দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, নামমাত্র খাল খনন করা হয়েছে, বর্তমানে খালে যে পানি রয়েছে সেটা পচা। আমার মনে হয়নি কাজটা সঠিকভাবে হয়েছে। 

জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড আর ঠিকাদারদের  মধ্যে চুরি-চামারি হয়েছে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা নয়-ছয় করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আজ খালটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কর্তৃপক্ষ। শুধু দু’বার নয়, এর আগেও কয়েকবার খাল খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। 

এবিষয় জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা। 

প্রতিনিধি/এইউ