জেলা প্রতিনিধি
০৮ মার্চ ২০২২, ০৮:১১ এএম
১০ টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করে আজ তিনি সফল নারী উদ্যোক্তা। সুঁই-সুতায় যিনি বদলে ফেলেছেন নিজের জীবনের গল্প, তেমনি স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তার মতো আরও অনেক নারীকে। বলছিলাম শেরপুরের আইরিন পারভীনের কথা। শহরে এখন তিনি ‘অনন্যা আপা’ বলেই পরিচিত। তার বুটিক কাজে সুনাম এখন সর্বত্রই।
মায়ের কাছে সেলাইয়ের কাজ শিখে ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাফলার সেলাই করে মজুরি পেয়েছিলেন দশ টাকা। আর সেই দশ টাকা উপার্জনের চেষ্টার মূলধন এখন পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা। সুঁই সুতোয় স্বপ্ন বুনে শেরপুর পৌর শহরের বাসিন্দা আইরিন পারভীন এখন সফল উদ্যোক্তাদের একজন।
আইরিন পারভীন। মায়ের কাছে সেলাইয়ের কাজ শিখে ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাফলার সেলাই করে মজুরি পেয়েছিলেন দশ টাকা। আর সেই দশ টাকা উপার্জনের চেষ্টার মূলধন এখন পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা। সুঁই সুতোয় স্বপ্ন বুনে শেরপুর পৌর শহরের বাসিন্দা আইরিন পারভীন এখন সফল উদ্যোক্তাদের একজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজ চেষ্টায় তিনি বাড়ান ব্যবসার পরিধি। শহরের প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেটে ‘অনন্যা বুটিকস’ ও ‘অনন্যা এস্কক্লুসিভ বুটিকস’ নামে দুটি শো-রুমের মালিক তিনি।
২০০২ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সফল আত্মকর্মী হিসেবে পুরস্কৃত হন আইরিন পারভীন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন।
আইরিন পারভীনের দুটি কারখানায় কাজ করছেন প্রায় দুইশতাধিক নারী। শহরের বড় কোনো কল কারখানা না থাকায় এখানকার নারীরা বেশিরভাগই বেকার। আর এমন নারীদের কাজের জায়গা করে দিচ্ছে আইরিন পারভীন। তার কারখানার কর্মীদের অনেকের মা এখানে কাজ করে সংসারের অবস্থার পরিবর্তন করেছেন, এখন মেয়েও যুক্ত হয়েছেন একই পেশায়। আর এখানে কাজ করে অনেকে ঘুরিয়েছে তাদের সংসারের চাকা। কর্মীদের হাতে তৈরি পণ্য রাজধানীর বড় বড় শো-রুমে বিক্রি হচ্ছে। যাচ্ছে ভারত, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশেও। মেয়েদের পোশাক, বিছানার চাদর, নকশি কাঁথাসহ শিশুদের জন্য তৈরি হচ্ছে বাহারি ডিজাইনের পোশাক।
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে অনন্যা বুটিকে কাজ করেন শ্রমিক নাসিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘একজনের রুজি দিয়ে আমাদের সংসার ঠিক মতো চলতো না। অনেক কষ্ট করতে হতো। আর এখন আইরিন আপার এখানে কাজ করে অভাব কেটেছে।’
দিঘারপাড় মহল্লার লিলি বেগম তিন বছর ধরে কাজ করেন আইরিন পারভীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে ছেলের পড়াশুনার খরচ চালাই। আর ছেলের বাবা ইজিবাইক চালিয়ে যা আয় করে তা দিয়ে সংসারের অন্যান্য খরচ করি।’
মাধবপুর এলাকার বাসিন্দা সাদিয়া নূর মাওয়া বলেন, ‘আমি বুটিকসের জামা পড়ি। আগে এসব জামা ময়মনসিংহ হতে কিনে আনতাম। এখন হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে তাও আবার নিজ শহরেই তৈরি। দেখে শুনে পছন্দের পোশাক নিতে আমি অনন্যা বুটিকসেই আসি।’
সজবরখিলা মহল্লার অনামিকা চন্দ দে নকশি কাঁথা কিনতে এসেছেন অনন্যা বুটিকসে। তিনি বলেন, ‘গতবার আমি এখান থেকে একটা কাথা নিয়েছিলাম। সেটা দেখতে খুব সুন্দর ছিল। এবার আরেকটা নিতে এসেছি। শহরে নকশি কাঁথার বেশি শো-রুম থাকলে আরও বেশি ক্রেতা আসতো, আর এতে উদ্যোক্তারা আরও এগিয়ে যেতে পারবে।’
২০০২ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সফল আত্মকর্র্মী হিসেবে পুরস্কৃত হন আইরিন পারভীন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন।
অনন্যা বুটিকের স্বত্বাধিকারী ও নারী উদ্যোক্তা আইরিন পারভীন বলেন, ‘ছাত্র জীবনের সেই দশ টাকায় আমাকে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ দেখিয়েছে। আমি সরকারি কিংবা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে কর্মীদের নিয়ে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারব। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে অনেকের। এরই মধ্যে আমার এখানে কাজ করে অনেক নারীই স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাই আমি একটি ক্ষুদ্র ঋণের দাবি জানাচ্ছি। আর আমি মায়ের মতো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেলাইয়ের কাজ করে যেতে চাই।’
নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আযাদ ঢাকা মেইলকে জানান, শেরপুরের নারী উদ্যোক্তারা বুটিক আর নকশি কাঁথায় স্বপ্ন বুনছেন। এটা ভাল সংবাদ। এতে করে নারীরা জীবন জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে অতুলনীয় ভূমিকা রাখছেন পুরুষের পাশাপাশি। ফলে অনেক নারী হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। ঘুরাচ্ছেন সংসারে অর্থনীতির চাকা। অবদান রাখছে দেশের অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শেরপুরের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান ফকির ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে নিয়মিত সহযোগিতা করে যাচ্ছি। যারা নকশী কাঁথা নিয়ে কাজ করছেন, এমন বেশ কিছুজনকে প্রশিক্ষণ ও ঋণের আওতায় আনা হয়েছে। যদি কোনো উদ্যোক্তা বিসিকের কাছে সহযোগিতা চায় তাহলে তাদের পরবর্তীতে সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ করানো হবে।’
টিবি