images

সারাদেশ

হাতিয়ায় জন্ম নিল সিত্রাং

জেলা প্রতিনিধি

২৬ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৫৯ পিএম

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং চলে গেলেও এর রেশ এখনও রয়ে গেছে। ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যার পরই শুরু হয়েছিল এর তাণ্ডব। অবশ্য আগের দিন ২৩ অক্টোবর থেকেই এর পূর্বাবাস পাওয়া যাচ্ছিল। সেদিনও দিনভর থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হয়েছিল। প্রতিদিনের মতো দুই বেলা নিয়ম করেই মেঘনায় জোয়ার আসে। কিন্তু সিত্রাংকের প্রভাবের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশিই ছিল জোয়ারের পানি।

রাতে জোয়ারের পানি নামতেও দেরি হচ্ছিল দেরি। ফলে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরণি ইউনিয়নের চতলার ঘাট এলাকার বেড়ির পাশের বসত ঘরগুলোর ভেতরে পানি ঢুকে যায়। খাট ছুঁইছুঁই পানি। তাই কোনো মতে চৌকিতে রাত পার করার টেনশনে ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা মা ফারজানা আক্তার (৩৩)। বেড়েছে ব্যথাও। ঘরে নেই পুরুষ। সিত্রাংয়ের ভয়াবহত উল্লেখ করে বিভিন্ন স্থানে মাইকিংও চলছে। ২৪ অক্টোবর (সোমবার) আঘাত হানার আগেই যেন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যেতে পারে, তাই তখন অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুরুষ শূন্য ঘর হওয়ায় কোথায় যাবেন ভেবেই পাচ্ছেন না ফারজানা। এদিকে বাড়ছে রাত, মেঘনায় পানি বাড়ছে, বাড়ছে ফারজানার প্রসব ব্যথা। 

বুধবার ফারজানা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, প্রসব ব্যথা বাড়ার কারণে স্থানীয় এক ধাত্রী আনা হয় তার ভাঙাচোরা ঘরে। রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে থৈ থৈ পানির বুকেই তার কোলজুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। তিন ছেলের পর তার কোলজুড়ে কন্যা সন্তান জন্ম হয়। তাও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর সময়। তাই জন্ম নেয়া সন্তানের নাম রেখেছেন সিত্রাং। পুরো নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। 

ফারজানা আক্তার হরণী ইউনিয়নের বয়ারচর এলাকার মো. শরিফ উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি জানান,  স্বামী নদীতে কাজ করেন। ওই দিন কোথাও নেটওয়ার্ক ছিল না, তাই কাউকে জানাতে পারি নাই সন্তানের কথা। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর দিন সন্ধ্যায় আঘাত হানে সিত্রাং। সেদিন পুরো রাতভর সন্তানকে কোলে নিয়ে পানিতেই ছিলেন তিনি। মাঝে মাঝে তার কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে রাত পার করেছেন দাদী ও নানী। 

sitraong

সিত্রাংয়ের দাদি নুর জাহান জানান, তুফানের আগের দিন রাতে নাতিন হইসে। ডাক্তারের কাছে নিতে পারি নাই। নরমালে হইসে। এ জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। বেড়ির কাছে থাকি আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। এ সময় তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ জানান, হাতিয়ার নদী ভাঙন যেন রোধ করা হয়। কারণ তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। 

বয়ারচরে সিত্রাং জন্ম নেওয়ার খবর শুনেছেন হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সেলিম হোসেন। তিনি বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের সিত্রাং জন্ম নেওয়ার খবর পেয়েছি। ওই পরিবারকে সরকারি ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি ঘর করে দেয়ার চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। 

প্রতিনিধি/একেবি