জেলা প্রতিনিধি
২৪ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪৫ পিএম
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন যশোরের কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় প্রস্তুত জেলা প্রশাসন। এ লক্ষ্যে জেলায় ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার ১২৯০টি প্রাথমিক ও ৯৩৬টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। প্রস্তুত করা হয়েছে জরুরি চিকিৎসকদল ও অ্যাম্বুলেন্স। পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ মজুদ রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান।
এদিকে, যশোর বিমানবন্দর আওবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান জানিয়েছেন, যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ২টি, কেশবপুরে ৫টি, শার্শায় ১টি, মণিরামপুরে ৩টিসহ মোট ১১টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও ৫টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং ১টি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ১২৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৯৩৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যশোর সকল স্বেচ্ছাসেবী, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
যশোর সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, 'জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেট টিম গঠন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ করা হয়েছে এবং অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে, ঝড়ে প্রভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে আমন ধানের চাষিরা। অনেক মাঠের ধান জমিতে পড়ে গেছে। বৃষ্টি যদি দীর্ঘ হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
চৌগাছার যাত্রাপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ আলী বলেন, মাঠে আমন ধানের শীষ পূর্ণ হচ্ছে। এমন সময়ে ঝড়ে ধান গাছগুলো সব জমিতে পড়ে যাচ্ছে। এর ফলে ধানের সঠিক ফলন না হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। শেষ সময়ে এসে ধানের জন্য এই ঝড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াল। এই বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে ধান অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
সদরের চুড়ামনকাটি পুলতাডাঙ্গা গ্রামের সবজি চাষি আমিন উদ্দিন বলেন, ভাড়ি বৃষ্টিপাত না হলে তেমন ক্ষতি হবে না সবজিতে। তবে ঝড় সব সময়ই কৃষকদের ভোগান্তি ও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জরুল হক বলেন, এই বৃষ্টি তেমন ক্ষতির কারণ হবে না। তবে ঝড় আঘাত হানলে অনেকেটাই ক্ষতি হতে পারে। এখন পর্যন্ত আমন ধানের ক্ষতি হওয়ার কোন তথ্য আমরা পাইনি।
অন্যদিকে, মাঝারি বৃষ্টির কারণে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সকাল থেকে খেটে খাওয়া মানুষকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে।
রিকশাচালক জব্বার আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে মানুষ বাইরে কম বের হয়েছে। রিকশা চালাতে পারিনি। রোজগারও নেই। কোনো আয় না থাকায় অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।’
অপরদিকে, মাঝারি বৃষ্টির কারণে শহরের চারখাম্বার মোড়, নোভা ক্লিনিক রোড, ফায়ার সার্ভিস টু পাইবপট্টি রোড, রানার অফিসের রোড, শংকপুর রোড, স্টেডিয়ামপাড়া, খড়কিসহ বিভিন্ন রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে পথচারীরা অনেক ভোগান্তি শিকার হচ্ছে। যশোরের ড্রেন এর জন্য বেশী ভোগান্তিতে মানুষ। ড্রেন থেকে পানি বেশীর ভাগ সময় রাস্তায় চলে আসছে। ড্রেন ব্যবস্থা যত দিন ভাল না হবে তত দিন মানুষের ভোগান্তি কমবে না।
খড়কির স্বপন সরকার ও শ্যামল দাস বলেন, অল্প বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। বারবার বলার পরেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ড্রেনগুলোর চারপাশের ময়লার কারণে বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে পানি ভালোভাবে যেতে পারে না।
প্রতিনিধি/এইচই