images

সারাদেশ

বগুড়ায় জমে উঠেছে শীতের আগাম সবজি বাজার 

জেলা প্রতিনিধি

১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৩৪ পিএম

শীতের হরেক রকম সবজি চাষে মেতেছেন বগুড়ার কৃষকেরা। মাঠে মাঠে শীতকালীন সবজি চাষের ধুম পড়েছে। অবশ্য কোনো কোনো এলাকার চাষি আগেভাগেই খেতে শীতের সবজি চাষ করেছেন। এরই মধ্যে মুলা, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজরসহ বেশ কিছু শীতের আগাম সবজি বাজারে উঠেছে। ভালো দাম পাওয়ায় শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। আবার আবহাওয়াও কৃষকের অনুকূলে। পাইকারি ও খুচরা হাটবাজারে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি বেচাকেনা জমে উঠেছে। জেলার চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে উৎপাদিত সবজি।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সবজির দাম বেশি। এক্ষেত্রে পরিবহন খরচ, শ্রমিক ও হাট-বাজারের খাজনাকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা। 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে শীতের আগাম সবজির চাষ হয়েছে। মুলা, শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ হরেক রকম শীতকালীন সবজিতে ভরপুর মাঠ। 

অধিদফতরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, এবার জেলায় ৪ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে শীতের আগাম সবজির চাষ হয়েছে। নতুন করে আরও ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শীতের আগাম সবজি বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে, তাই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

bogura

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজির হাট বগুড়ার মহাস্থান। দেশের প্রত্যন্ত জেলা থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমে উঠেছে এ হাট। আগাম ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, ঢেঁড়স, ছাচি লাউ, করল্লা, গাজরসহ নানা সবজিতে ভরে উঠেছে হাট। সপ্তাহে দুইদিন হাট বসলেও প্রতিদিনই সবজির বাজার বসে এখানে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ট্রাকবোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। 

মহাস্থান হাটে মোকামতলা থেকে আসা ইসমাইল জানান, গত বছর ফুলকপিতে ভালো লাভ হওয়ায় এবার অনেকে উৎসাহিত হয়ে ফুলকপি চাষ করেছে। এ জন্য এবার ফুলকপির উৎপাদন বেড়েছে। 

bogura

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী কৃষি অফিসার ফরিদ উদ্দিন জানান, জেলায় এবার ১৩৫০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে কপি চাষের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ কৃষি কর্মকর্তা। 

তিনি জানান, গত বছর ফুলকপির আবাদে লাভ বেশি হওয়ায় এবার অনেক কৃষক কপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

একই জমিতে ৪ দফা ফুলকপির চাষ হয়ে থাকে বলে জানান মহাস্থান হাটে ফুলকপি বিক্রি করতে আসা মালেক মিয়া। তিনি জানান, প্রথম দফার উৎপাদিত ফুলকপি বিক্রি করে ফেলেছে অধিকাংশ কৃষক। এখন দ্বিতীয় দফার চাষ করা কপি বাজারে এসেছে। দ্বিতীয় দফার ফুলকপি আকার বেশ বড়। 

কৃষক মালেক আরও জানান, তার দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে খরচ হয়েছে ৩০হাজার টাকা। তিনি প্রথম দফা চাষে ৪০ মণ কপি পেয়েছেন। এতে প্রায় ৩২ হাজার টাকা লাভ করেছেন। 

bogura

কৃষক হোসেন জানান, গতবছর ৫ বিঘা জমিতে কপি চাষ করে ৪ লাখ টাকা লাভ করেছেন। বিঘাতে ২৫০ মণ কপি পেয়েছেন। ৫ বিঘাতে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। এবারও ভালো ফলন হয়েছে। গত বছরের মতো আশানুরূপ লাভ করবেন বলে তিনি জানান।

বিগত বছরের মতো এবারও ভালো ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

bogura

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ধরনের শাকসহ ৪২ প্রকারের সবজি উৎপাদন করেন চাষিরা। সারা বছর ধরে এসব সবজি চাষ হয়ে থাকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। তবে শীতকালীন মৌসুমে বেশি সবজি চাষ হয়। চাহিদার কারণে কৃষকদের মধ্যে উন্নতজাত ও বেশি করে সবজি চাষে পরামর্শ ও উৎসাহিত করা হয়েছে। 

বগুড়ার সবজিই ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করে থাকে। আগাম জাতের সবজি কিছু এলাকায় চাষ হয়েছে। কিছু কিছু এলাকার চাষিরা আগাম জাতের মুলা, ফুলকপি, পালং শাক, মুলা শাক ও শিম বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। 

এ বছর ১৮ হাজার ১৮৮ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে ফলন ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৪৩ টন। তবে শীতকালীন মৌসুমে বেশি সবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে। সবজি কেনাবেচাসহ খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে চাষিরা। শীতকালে ১২ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে এবার সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টন। এরই মধ্যে আগাম জাতের সবজি উঠেছে হাটবাজারগুলোতে। ভালো দামের আশায় অনেকেই আগাম জাতের এসব সবজি বাজারে নিয়ে এসেছে। 

bogura

পাইকারি হাট মহাস্থানে শিম প্রতি মণ ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা, ফুলকপি ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকা, পেঁপে ২ শত টাকা, বেগুন ৬ শত থেকে ৮ শত, মুলা ১৪ শত থেকে ১৫ শত, পটল ৯ শত থেকে ১ হাজার, করলা ১ হাজার ২ শত থেকে ১ হাজার ৪ শত, পটল ১ হাজার ৩ শত, কাঁচামরিচ ১ হাজার ৮ শত থেকে ২ হাজার, বেগুন ১ হাজার ৪ শত থেকে ১ হাজার ৬ শত, লাউ প্রতি পিস ১০ থেকে ২০, মিষ্টি লাউ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২ শত টাকায় মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, বগুড়ায় সবজি চাষ শুরু হয়েছে। গত বছর ভালো ফলন পাওয়া গিয়েছিল। বগুড়ায় সবজি চাষে সব সময় সফলতা পেয়ে থাকে। এ বছরও সফলতা পাবে। সারা বছর এ জেলায় সবজি চাষ হয়, বগুড়ায় প্রতি বছর দুই মৌসুমে ১৮ হাজার ১৮৮ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। জেলার চাহিদা সোয়া লাখ টন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে যাচ্ছে বগুড়ার সবজি।

অক্টোবর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শীতকালীন সবজি চাষাবাদ ও হাটে বাজারে পাওয়া যায়। মহাস্থান হাটের সবজি বিক্রেতারা জানান, শীতকালীন আগাম জাতের সবজি চাষ করেছেন তারা, হাটেবাজারে নিয়ে এসে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। ভালো ফলনে ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। 

bogura

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, তারা ভালো মানের সবজি ক্রয় করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে। পরিবহন খরচ, শ্রমিক ও হাটবাজারের খাজনার কারণে বগুড়া থেকে অন্য জেলায় সবজি পাঠাতে তাদের খরচ হয়, এ কারণে দেশের অন্যান্য স্থানে দাম বেড়ে যায়।

ব্যবসায়ী রহিম জানান, তিনি জাংলার লাউ পাঠাচ্ছেন চিটাগাং প্রতি পিস লাউ এখানে ১০ থেকে ২০ টাকায় ক্রয় করেছেন, এক পিস লাউ অন্য জেলায় পাঠাতে তার ৬ থেকে ৭ টাকা খরচ হয়।

বগুড়ার গোকুল থেকে আব্দুল খালেক নামের এক কৃষক জানান, এই ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়। এখানে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। শিম, মুলা, পালং শাক চাষ হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, মহাস্থান হাটে পালং শাকসহ বিভিন্য শাক-সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে।

প্রতিনিধি/এইচই