জেলা প্রতিনিধি
০৫ মার্চ ২০২২, ১০:১৯ এএম
‘গামছা নিবেন নাকি গো গামছা। এ...ই গামছা নিবেন নাকি গো গামছা।’ —এমন হাকডাকে নজর কাড়ে বিল্লাল। দেখা যায়— রাস্তার পাশে পার্কিং করা দু’টো মোটরসাইকেলের ওপর নতুন গামছা সারি সারি সাঁজিয়ে রেখেছেন তিনি। ভাঁজ করা আরও অনেক গামছা রয়েছে তার কাঁধে। অভিনব কায়দায় গামছা ডিসপ্লে আর তার হাকডাকে ক্রেতারাও আকৃষ্ট হন।
বিল্লালের পুরো নাম বিল্লাল হাওলাদার। বাড়ি খুলনার ফুলতলা উপজেলার গাড়াখোলা এলাকায়। সে জানায়, ভোর রাতেই তাদের ওপাড়ায় সকলের ঘরে আলো জ্বলে উঠে। ওই সময়েই আগুন দেয় উনুনে পড়ে যায় রান্না করার ধুম। খাওয়া শেষ করে পাড়ার পুরুষেরা রাতে গুছিয়ে রাখা গামছা বোঝাই গাইট কেউ মাথায় আর কেউ কাঁধে ঝুলিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়। গন্তব্য শহর।
সূর্য ওঠার আগেই তারা ফুলতলা বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে যান। দল বেধে উঠে পড়েন খুলনাগামী কোনও খালি ট্রাকে। ফুলতলা থেকে বাস বা মাহেন্দ্রায় (থ্রি হুইলার) খুলনা আসতে লাগে ৬০-৮০ টাকা। আর খালি ট্রাকে লাগে জনপ্রতি মাত্র ২০ টাকা। এভাবে সকাল ৮টার আগেই তারা খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা বা নিউ মার্কেট এলাকায় পৌঁছে যান। এরপর প্রত্যেকে আলাদা আলাদা এলাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। সেখানে গিয়ে গাইট কাঁধে নিয়ে আর দু-চারটি গামছা অন্য হাতের উপর নিয়ে পায়ে হেঁটে বিক্রি করেন বাঙ্গালীর জীবন যাপনে অতিপ্রয়োজনীয় এই গামছা।

জানা যায়, গামছা শব্দটা এসেছে গা মোছা এই দুটো শব্দ থেকে। বাঙ্গালীর জীবনে গোসল করে গা মুছতে গামছা, বাসায় ভাত খেয়ে হাত মুখ মুছতে গামছা, গায়ের ঘাম মুছতে গামছা। এরকম অনেক কাজেই রয়েছে গামছার ব্যবহার।
বিল্লাল হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন আমি এক-দেড়শ’ গামছা নিয়ে শহরে আসি। সারাদিন পায়ে হেঁটে বা কোনও স্থানে দাঁড়িয়ে বিক্রি করি। দুপুরে কোনও কমদামের হোটেলে খেয়ে নেই। দিন শেষে তিন, চারশ’ টাকা লাভ হয়। তাই নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ির ফিরি। পরের দিন আবার শুরু হয় একই তোড়জোড়।
ওই এলাকার আরেক গামছা বিক্রেতা মোঃ মিজানুর রহমান। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। তিনি বলেন, আমার বাবাও একইভাবে শহরে ফেরি করে গামছা বিক্রি করতেন। এখন আমি আর আমার ছেলেও সেই ব্যবসা করি। প্রতিদিন যা আয় হয়। তা দিয়ে দিন চলে যায়।
এএ