images

সারাদেশ

৩০ বছর বন্ধ ছাত্রাবাস, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৫ লাখ!

জেলা প্রতিনিধি

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:১৩ এএম

বান্দরবান সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। জেলার প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। বিভিন্ন সমস্যায় এখন জর্জরিত। ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫০ সালে। প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৬২ সালে জাতীয়করণ করা হয় বিদ্যালয়টিকে। 

পার্বত্যজেলার ৭২ বছরের পুরনো এই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষাদান চলে দুই শিফটে। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ শ। শিক্ষক থাকার কথা ৫৩ জন। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩২ জন। বিভিন্ন বিষয়ে ২১ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে শূন্য অবস্থায়। ৩২ বছর ধরে বন্ধ এখানকার ছাত্রাবাস। পাঁচ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে বিদ্যুৎ বিলে। তবে সমস্যার শেষ এখানে নয়। 

স্কুলের দক্ষিণ দিকে দেয়ালের সীমানা ঘেঁষে আছে মুরগীর দোকান। দুর্গন্ধে ক্লাসে টেকা ভার। এনিয়ে মুরগীর দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। 

বান্দরবান সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিপ্তী কণা দে ঢাকা মেইলকে জানান, দুই শিফটে শিক্ষার্থীরসংখ্যা এগার শতাধিক। দুই শিফটে শিক্ষকের পদ আছে ৫৩ জনের। কিন্তু কর্মরত আছেন প্রধানশিক্ষকসহ ৩২ জন। বর্তমানে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ছয়টি শিক্ষকের পদ শূন্য। ভৌত বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান ও শারীরিক শিক্ষায় প্রতিবিষয়ে দুইজন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু একজন করে শিক্ষক আছেন অন্যান্য বিষয়সহ মোট ২১ জন শিক্ষকরের শূন্যপদ রয়েছে।
 
শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে স্কুলের শূন্যপদ পূরণের জন্য আবেদন করার কারণে চলতি মাসে মাত্র একজন নতুন শিক্ষক যোগদান করেছেন।
  
৩০ বছর বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস বন্ধ! 
পার্বত্য চট্টগ্রামে অনগ্রসর পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য দুর্গম অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে থাকা খাওয়া ও দুঃচিন্তহীনভাবে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এসএসসি পর্যন্ত ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করার সুযোগ পেত। 

১৯৮২ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার তিন পার্বত্য জেলায় (বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি) জেলা শহরগুলোতে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য উপজাতীয় ছাত্রাবাস চালু করেছিল। দুর্গম অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরা সেই ছাত্রাবাসে অবস্থান করে নিরাপদে লেখাপড়া করতে পারতো। কিন্তু ১৯৯২ সালে তিন পার্বত্য জেলার ছাত্রাবাসগুলো হঠাৎ বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। যা অদ্যবধি বন্ধই আছে। কি কারণে গরিব ছাত্রদের আশ্রয়স্থল ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ করে দিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর শিক্ষালাভ বন্ধ করেছিল, তা আজও অজানা। 

বর্তমানে বন্ধ ছাত্রাবাসটির বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পাঁচ লাখ টাকা রয়েছে বলে জানান প্রধানশিক্ষিকা দিপ্তী কণা দে। 

বান্দরবান সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক ও শিক্ষাবিদ শম্ভু কুমার সেন (৭২) ১৪ বছর আগে অবসরে গেছেন। তিনি এখনও বান্দরবানের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন, বান্দরবান সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কম বেশি শিক্ষক সংকট সবসময় ছিল। আগে আরও বেশি ছিল এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির প্রচেষ্টায় শিক্ষকের শূন্যপদ অনেকটাই পূরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

বান্দরবান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সরিৎ কুমার চাকমা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রকল্প বরাদ্দ দিয়ে ছাত্রাবাসে অবস্থানরত ছাত্র-ছাত্রীদের খাবারের যোগান ও স্টাফদের বেতন ভাতা প্রদান করা হতো। কিন্তু প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়ওয়ার কারণে ছাত্রবাসটিও বন্ধ হয়ে যায়। 

তিনি আরও জানান, ছাত্রবাসটি আবারও চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে প্রকল্পের মাধ্যমে ছাত্রাবাসটি চালু করেছিল, সেরকম প্রকল্প বরাদ্দ পেলে অচিরেই ছাত্রাবাসটি চালু করা হবে বলে জানান তিনি। 

৩২ বছর বিদ্যালয়টির ছাত্রাবাস বন্ধ কেন জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ডা. মো. শেখ ছাদেক ঢাকা মেইলকে জানান, আগে প্রকল্প বরাদ্দ সাপেক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে ছাত্রাবাসটি পরিচালিত হতো। কিন্তু প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ছাত্রাবাসটিও বন্ধ হয়ে যায়। 

এছাড়া ৩২ বছর ধরে ঠিক কি কারণে বান্দরবান সরকারি উচ্চবিদ্যালয়টির ছাত্রাবাস বন্ধ রয়েছে খোঁজখবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান তিনি। আর শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণে শিক্ষা অধিদফতরে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান। 

প্রতিনিধি/এইউ