images

সারাদেশ

ভূরুঙ্গামারিতে প্রশ্ন ফাঁস: ৪ পরীক্ষা স্থগিত, ৫ শিক্ষক আটক

জেলা প্রতিনিধি

২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:৫৫ পিএম

চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে একই বিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট আটক করা হলো পাঁচজনকে। আটকরা নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা সবাই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট। 

আটকদের মধ্যে ওই কেন্দ্রের সচিব প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান, ইংরেজি শিক্ষক রাসেল মিয়া এবং ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক যোবায়ের হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আটক একই বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক হামিদুর রহমান এবং বাংলা বিষয়ের শিক্ষক সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে আরও কয়েকটি নাম পাওয়া গেছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।  

এদিকে এ ঘটনায় দিনাজপুর বোর্ডের গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ও কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের বোর্ডের ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়। নোটিশে বলা হয়, এসব বিষয়ের পরীক্ষার তারিখ পুনরায় জানানো হবে। অন্যান্য সব বিষয়ের পরীক্ষা রুটিন অনুযায়ী হবে।

চলমান এসএসসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার নেহাল উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ভূরুঙ্গামারীতে আসেন দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলমসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা। তারা রাত ৮টা থেকে ১২ পর্যন্ত ভূরুঙ্গামারী থানা ও ইউএনও কার্যালয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করেন। এরপরই মামলা রুজু হয়। এ সময় থানায় আটক থাকা তিন শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান। এতে প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা মেলে।

রাতে আটক তিন শিক্ষকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামী ভূরুঙ্গামারী থানায় মামলা দায়ের করেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য অফিসার আদম মালিক চৌধুরী।

তবে প্রশ্নফাঁস নিয়ে করা মামলায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে বাদ দেয়া এবং কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য অফিসার আদম মালিক চৌধুরী মামলার বাদী হওয়া নিয়ে শিক্ষা সংশ্লিস্টদের মাঝে নানা সমালোচনা চলছে। অনেকে বলছেন এ দুই কর্মকর্তা প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত। কারণ এদের মধ্যে শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রশ্নের সিলগালা করা প্যাকেট শিক্ষকদের দেয়া হয়। অন্যদিকে কেন্দ্রে ট্যাগ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্যাকেট হিসাব ও খোলা হয়। যেহতেু প্যাকেটসহ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেখানে এ দুই কর্মকর্তা দায় এড়াতে পারেন না। 

প্রশ্ন ফাঁস কীভাবে হয়েছে, সে বিষয়টি পুলিশ এখনও স্পষ্ট না করলেও একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, চলতি এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন ভূরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের করা বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নের প্যাকেটের ভেতর বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের একটি করে প্যাকেট নেয়া হয়। এসব প্রশ্ন ওই শিক্ষকদের চালানো কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদেরকে অর্থের বিনিময়ে হাতে লিখে সরবরাহ করা হয়।  বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল ১০টায় এমন হাতে লেখা কিছু প্রশ্ন আসে স্থানীয়দের হাতে। পরীক্ষা শুরু হলে দেয়া যায় হাতে লেখা প্রশ্নগুলোর সাথে মূল প্রশ্নের সাথে হুবহু মিল।

একইভাবে ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষার আগে পাওয়া হাতে লেখা প্রশ্নের সাথে মূল প্রশ্ন মিলে গেলে প্রশাসনকে বিষয়টি জানান অনেক শিক্ষক। কিন্তু বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশ জানায়, পরীক্ষার প্রশ্ন থানায় নিরাপত্তার সাথে রাখা হয়। কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা এসে নিজেদের মতো করে প্রশ্ন পত্র নিয়ে যান। আগে কমিটিতে থানা পুলিশের একজন সদস্য ছিল। কিন্তু এখন তাও রাখা হয়নি। সে কারণে শুধু তালা দিয়ে রাখা এবং খুলে দেয়া ছাড়া পুলিশের কোনো কাজ নেই। 

ইংরেজি প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের সাথে একইভাবে রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান এবং কৃষি বিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন অভিযুক্তরা। পরীক্ষার আগে এসব প্রশ্ন পত্র হাতে লিখে অর্থের বিনিময়ে নিজেদের কোচিং এর শিক্ষার্থীদের দিতো অভিযুক্ত শিক্ষকরা। ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও এ প্রশ্নপত্র পেতো অনেকে। 

ইংরেজি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি থানায় অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপরই নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, একই বিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারি শিক্ষক যোবায়ের হোসেন ও ইংরেজি শিক্ষক রাসেল মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। 

ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি দু’জনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরও কিছু নাম পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো যাচাইবাছাই চলছে।

প্রতিনিধি/এএ