images

সারাদেশ

‘আমার লাশটা আগুনে পুড়িয়ে পাহাড় নদীর বাতাসে উড়িয়ে দিও’

জেলা প্রতিনিধি

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:২৯ পিএম

images

নিজের ব্যবহৃত পাগড়ি গলার সঙ্গে পেঁচানো অবস্থায় ভোলার দৌলতখান উপজেলা থেকে আব্দুল হালিম (২৪) নামে এক ইমামের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে মরদেহের পাশ থেকে তিনটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টার দিকে উপজেলার চর খলিফা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাসমত বেপারি বাড়ি জামে মসজিদের কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়।

নিহত আব্দুল হালিম ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর চন্দ্র প্রসাদ গ্রামের মো. ফারুক ফরাজির ছেলে। তিনি হাসমত বেপারি বাড়ি জামে মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি একই উপজেলার চর খলিফা কওমী মাদরাসার দাওরা হাদিস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আত্মহত্যার আগে ডায়েরির তিনটি পাতায় চিরকুট লিখে গেছেন আব্দুল হালিম। তাতে লেখা- ‘আমার লাশটা আগুনে পুড়িয়ে পাহাড় নদীর বাতাসে উড়িয়ে দিও। কারণ, আমার জীবনটা হলো পাপিষ্ঠ জীবন। জীবনে আমি এমন কোনো জায়গায় যাইনি, যে জায়গা আমার পাপের সাক্ষী হইনি। অর্থাৎ যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই পাপ করেছি।’

Suicideআব্দুল হালিম চিরকুটে আরও লেখেন- ‘সবাইকে বলছি, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। ছোটবেলা থেকেই অনেক গুনাহ করেছি। তাই এই দুনিয়া আমার ভালো লাগে না। আমার কাছে যায়েদের ও হযরত আলী ভাইয়ের কিছু কিতাব আছে। সেগুলো মসজিদের আলমারিতে, তা তাদের কাছে পৌঁছে দিও।’

চিরকুটে আরও লেখা- ‘হে লোক সকল! তোমরা অল্পে তুষ্ট থাকো। একাধিক বিবাহ মন্দ মনে করিও না। কেননা এটা আল্লাহর বিধান রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লামের সুন্নত। আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করো না। কারো প্রতি জুলুম করো না। নিজেকে ছোট মনে করো, অন্যকে বড় মনে করো।’

অসিয়ত উল্লেখ করে চিরকুটের তৃতীয় পাতায় আব্দুল হালিম লিখেছেন, ‘আমার লাশকে তোমরা সরকারি কারো হাতে দিয়ো না। আমার কিতাবগুলো মাদরাসায় দিয়ে দিও। আমার মেয়েটার খোঁজ-খবর নিও। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ কান্না করো না। আমার মাকে সান্ত্বনা দিও, যেন আল্লাহ তায়ালার ওপর দোষারোপমূলক কোনো কথা না বলে। আমার মৃত্যুর খবর কাউকে জানাইও না।’

Suicideএই তিন পাতার চিরকুট লেখার পাশাপাশি আত্মহত্যার আগে আব্দুল হালিম তাঁর ভগ্নীপতি মো. রাসেল হোসেনের ফোনে একটি মেসেজও পাঠিয়েছেন। যেখানে লেখা- ‘আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সুস্থ ও হেফাজতে রাখুন, আমিন। আর মাকে একটু সান্ত্বনা দিয়েন। যেন শোকে ঈমান না হারায়। আল্লাহ হাফেজ।’

দৌলতখান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, মঙ্গলবার ভোররাত ৫টার দিকে ৯৯৯-এ কল পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি আব্দুল হালিম হাসমত বেপারি বাড়ি জামে মসজিদের সঙ্গে থাকা তাঁর শয়নকক্ষে নিজের ব্যবহার করা পাগড়ি গলায় পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয় মুসুল্লিরা ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখেন- ইমাম আব্দুল হালিম আত্মহত্যা করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে।

Suicideনিহতের ভগ্নীপতি রাসেলের বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ইমাম আব্দুল হালিম দুইটি বিয়ে করেছেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর সংসারে চার মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। উভয় স্ত্রী তাঁর মনের মতো না হওয়ায় তাদের দুজনকেই তিনি তালাক দিয়ে একা জীবনযাপন করছিলেন। আর চার মাসের কন্যা শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে। তিনি এলাকায় অনেক ঋণে ছিলেন। চারদিকের মানসিক চাপে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, নিহত ইমাম আব্দুল হালিমের মরদেহ উদ্ধার করে চিরকুট তিনটিসহ দৌলতখান থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। পরিবার ময়না তদন্ত ছাড়া মরদেহ নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আমরা দৌলতখান থানায় এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

/আইএইচ