images

সারাদেশ

ঐতিহাসিক নিদর্শনে ভরপুর আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ

জেলা প্রতিনিধি

২৮ আগস্ট ২০২২, ১১:৩৫ এএম

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। জেলাটিকে আমের জেলা বলেই চেনেন সবাই। আমের পাশাপাশি জেলা ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং প্রত্নসম্পদেও সমৃদ্ধ। জেলায় ৫টি উপজেলা। তার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি দর্শনীয় স্থান আছে। হিন্দু শাসন আমলে, বিশেষ করে সেন বংশের শেষ রাজাদের খননকৃত দিঘী ও সুলতানী আমলে মুসলিম সুলতানদের নির্মিত মসজিদই এ উপজেলার অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক স্থাপনা।
 
এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নে বাবু ডাইং নামক প্রাকৃতিক টিলা রয়েছে। উঁচু-নিচু একাধিক টিলা ও প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত পর্যটক এখানে আসেন। মহানন্দা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য ও মহানন্দা ব্রিজ দেখার জন্য প্রতিদিনই অনেক দর্শনার্থী আসেন এখানে। দ্বিতীয় মহানন্দা সেতুতেও (শেখ হাসিনা সেতু) অনেক দর্শনার্থীরা ভিড় জমে প্রতিদিন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউয়িনের দুই নম্বর ওয়ার্ডের আলীশাহপুর গ্রামে প্রায় ৫শ’ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদ কালের সাক্ষী হিসাবে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
chapaiচাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোমস্তাপুরের ষাঁড়বুরুজ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত। এ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র রহনপুর ও এর আশেপাশে রয়েছে অগনিত প্রাচীন ঐতিহ্যের নির্দশন। রাজা লক্ষন সেনের আমলে রহনপুর বানিজ্য নগরী হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেখানে ষাড় বুরুজ বা রাজপ্রসাদ স্থাপন করেছিলেন তিনি। 

ছোট সোনামসজিদ ‘সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন’ বলে আখ্যাত। শিলালিপিতে নির্মানের সঠিক তারিখ সম্বলিত অক্ষরগুলি মুছে গেছে। তবে এতে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর নামের উল্লেখ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, মসজিদটি তার রাজত্বকালের (১৪৯৪-১৫১৯) কোন এক সময় নির্মিত।

তার কয়েকশ মিটার দূরেই দারাসবাড়ি মসজিদ। এর আয়তন ৯৯ ফুট ৫ ইঞ্চি ও ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি। উপরে ৯টি গম্বুজের চিহ্নাবশেষ রয়েছে। এখন শুধু মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। দারসবাড়ি মসজিদের বাহির এবং অভ্যন্তর দেয়ালে টেরাকোটা খচিত। আশপাশের যে ক’টি মসজিদ আছে সে সবের চেয়ে এ মসজিদটি অধিকতর সুন্দর। জানা যায়, এখানে প্রায় ৫০০ বছর আগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। 
chapaiদারাস বাড়ি মাদ্রাসা ও চল্লিশঘর: আরবি শিলালিপি অনুসারে ৮৮৪ হিজরি অনুযায়ী ১৪৭৯ সালে সুলতান শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে তারই নির্দেশে মসজিদটি নির্মিত হয়।

খঞ্জনদীঘির মসজিদ: দারাস বাড়ি মসজিদের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত বল্লাল সেন খনন করা বালিয়াদীঘির দক্ষিণ পাড় ঘেঁষে পূর্ব দিকে কিছুদূর গিয়ে চোখে পড়ে খঞ্জন দীঘির মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। খঞ্চন দীঘির মসজিদটি অনেকের নিকট খনিয়াদীঘির মসজিদ নামে পরিচিত। আবার অনেকে একে রাজবিবি মসজিদও বলে থাকেন।

চামচিকা মসজিদ: দারাস বাড়ি মসজিদের মতই পোড়ামাটি ইট ও কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর দেয়ালের পরিধি এত মোটা যে চৈত্র মাসের প্রচন্ড গরমে এর ভিতরে শীতল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। এর মূল গম্বুজটি অতি সুন্দর। এই মসজিদের পূর্বে ৬০ বিঘা আয়তনের খঞ্জন দিঘী নামে একটি বড় দিঘী রয়েছে।
chapaiতাহখানা কমপ্লেক্স: তাহখানা পারসিয়ান শব্দ যার আভিধানিক অর্থ ঠান্ডা ভবন বা প্রাসাদ। গৌড়-লখনৌতির ফিরোজপুর এলাকায় একটি বড় পুকুরের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ভবন কাঠামোটি ঐতিহ্যগতভাবে তাহখানা নামে পরিচিত।সমাধিটি সম্ভবত দরবেশের (মৃত্যু ১৬৬৪ অথবা ১৬৬৯ খ্রিঃ) অন্তিম শয়নের জন্য পূর্বেই নির্মিত হয়েছিল।

তিন গম্বুজ মসজিদ: শিবগঞ্জ উপজেলা ফিরোজপুরস্থিত শাহ্ নেয়ামতউল্লাহ (রহ.) প্রতিষ্ঠিত তদীয় সমাধি সংশ্লিষ্ট তিন গম্বুজ মসজিদটি মোঘল যুগের একটি বিশিষ্ট কীর্তি। এতে ৩টি প্রবেশ পথ এবং ভেতরে ৩টি মেহরাব রয়েছে।
chapaiহযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহর মাজার শরীফ: শিবগঞ্জ উপজেলার তোহাখানায় অবস্থিত এটি। বার দরজা বিশিষ্ট চতুস্কোনায়তন তার সমাধিটি। প্রত্যেক পাশে ২/৩ টি করে দরজা আছে। এখানে যে লিপিটি আছে তা হোসেন শাহী যুগের একটি আরবী লিপি।

কোতোয়ালী দরওয়াজা: নগর পুলিশের ফারসি প্রতিশব্দ ‘কোতওয়াল’ এর অনুকরণে নামকরণ করা হয়েছে এটি। এ নগরপুলিশ (কোতওয়াল) গৌড় নগরীর দক্ষিণ দেয়াল রক্ষা করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। প্রাচীন গৌড়ের রাজধানীতে প্রবেশ করতে হলে দক্ষিণ ‘নগর উপকন্ঠে’র অধিবাসীদের অনুমতিক্রমে ঢুকতে দেয়া হত।

ধনাইচকের মসজিদ: খঞ্জনদীঘি মসজিদের অদূরেই রয়েছে আরও একটি প্রাচীন মসজিদ। এই মসজিদটির নাম ধনাইচকের মসজিদ। এটিও ১৪ শতকে নির্মিত হয়েছে। এর দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্য। 

ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাগুলো দেখতে প্রতিদিন দেশ ও দেশের বাইরে হতে পর্যটকরা ভিড় করেন। এসব স্থাপনার পাশেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা আরও বেশি হয়। কারণ এই স্থলবন্দর দিয়েই প্রতিদিন হাজারো মানুষ পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে যাতায়াত করে। তাছাড়া শত শত টন পণ্য আমদানি-রফতানি হয় স্থলবন্দর দিয়ে।

প্রতিনিধি/এএ