জেলা প্রতিনিধি
২৭ আগস্ট ২০২২, ১২:১৭ পিএম
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে পশ্চাৎপদ রোয়াংছড়ি ও রুমা দুই উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উন্নয়নের জন্য ৪৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাল নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ জুন থেকে ২০২২ জুন পর্যন্ত। তবে দীর্ঘ চার বছর প্রকল্প মেয়াদ কাল শেষ হয়ে গেলেও সমাপ্ত হয়নি এ প্রকল্পের ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ।
দূর্নিবার পাড়া, সেফ্রু পাড়া ও দেবতা পাহাড় এলাকার বেশকিছু স্থানে মাটি কাটা ছাড়া তেমন কাজই করেনি ঠিকাদার। ফলে নির্ধারিত সময়ে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় সরকারের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা যেমন ব্যহত হচ্ছে, তেমনি এলাকার জনগণের দুর্ভোগও লাঘব হয়নি।
অতি সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোয়াংছড়ি থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা কার্পেটিং হয়েছে। দূর্নিবার পাড়া থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার মেকাটম এর কাজ সম্পূর্ণ হলেও হয়নি কার্পেটিং। বালু পাহাড় এলাকায় কার্পেটিং শেষ হলেও হলেও হয়নি সম্পূর্ণ ড্রেনের কাজ। দেবতা পাহাড় এলাকায় দৈর্ঘ্য ২৬ ও প্রস্থ ৬ ফিট আকারের সেতুও কার্পেটিং হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পাহাড়ের মাটি কাটা ছাড়া তেমন কোনো কাজই করেনি ঠিকাদার। চান্দাক পাড়া ও ছাইফু পাড়ার মাঝামাঝি এলাকায় সেতুটি সম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও অর্ধ নির্মিত করে ফেলে রাখা হয়েছে সেতুটি।
এছাড়া কার্পেটিং করা সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং ও ড্রেন ফেটে যাওয়ার চিত্র দেখা যায়। এছাড়া সড়কের পাশে ৩৬টি সৌর লাইট(স্ট্রিট লাইট) দেখা যায়। কয়েকটি স্ট্রিট লাইট নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ৪৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অক্টোবর- ২০১৮ সাল থেকে জুন, ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করে পশ্চাৎপদ রোয়াংছড়ি ও রুমা দুই উপজেলা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উন্নয়নের জন্য এবং উপজেলা ভিত্তিক সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর হতে রুমা উপজেলা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পল্লী সড়ক নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল।
এই প্রকল্পের প্রধান উপাদান ছিল, ১৯০৩৬৬.৬০ ঘ: মি: মাটির কাজ, ২০.০০ কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, ৫০০ মি. রিজিড পেভমেন্ট, ৮০ মি. কালভার্ট, ২১৮৫৯.৬৯ মি. ড্রেইন, ২৫০.০০ মি. আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল, ৮০০ মিটার ব্রীক রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণও ১০০ টি সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল (স্ট্রীট লাইট) স্থাপন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, রোয়াংছড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার কার্পেটিং ভালো হলেও অধিকাংশ কাজের মান খুবই নিন্মমানের। বিশেষ করে রাঙ্গামাটির ঠিকাদার লিটনের কাজ। এছাড়া ঠিকাদার কামাল হোসেন (লেস কামাল) কাজ শুরু করেছেন মাত্র। ফলে নির্মাণাধীন রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কের স্থায়ীত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
এবিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান পার্বত্য জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবদুল আজিজ জানান, ২০১৮ জুন থেকে ২০২২ জুন পর্যন্ত রোয়াংছড়ি-রুমা ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৫০ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হলেও করোনা মহামারী ও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে এই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ সড়কটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। একারণে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্প মেয়াদ কাল আগামী ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত এবং প্রকল্প ব্যয় ৫০ কোটি থেকে ৭১ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
দেবতা পাহাড় এলাকায় (রোয়াংছড়ি ও রুমা সড়কের মধ্যবর্তী এলাকা) দেরিতে কাজ শুরু করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আবদুল আজিজ জানান, এই কাজটি চলতি বছরের জুন মাসে টেন্ডার হয়েছে এখন কাজ করছেন ঠিকাদার। এছাড়া এই প্রকল্পটি তিনি (আব্দুল আজিজ)নিজেই তদারকি করছেন এতে নিন্ম মানের সামগ্রী ব্যবহার বা অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
সোলার প্যানেল স্ট্রিট লাইটের বিষয়ে জানান, কয়েকটি ব্রীজের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় লাইট বসানোর কাজ শেষ করা হয়নি এবং এরই মধ্যে যে লাইটগুলো নষ্ট হয়েছে সেগুলো দেখে মেরামত করার জন্য টেকনেশিয়ান পাঠানো হবে।
/এএস