images

সারাদেশ

জামালপুরের মাটিতে ইতিহাসের পাঠশালা

জেলা প্রতিনিধি

৩০ জুলাই ২০২২, ০১:৩০ পিএম

মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর। যেখানে এক ছাদের নিচেই দেখতে পাওয়া যায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরতেই জামালপুরের মেলান্দহের প্রত্যন্ত অঞ্চল কাপাশ হাটিয়া গ্রামে এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ব্রিটিশ শাসনামলে মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিল ভারতবর্ষের মানুষ। স্বদেশী চেতনায় ভারতজুড়ে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল গান্ধী আশ্রম। এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে সময় নাসির উদ্দিন সরকার নামে এক গান্ধীভক্ত জামালপুরের নিভৃত গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন গান্ধী আশ্রম।
mukti songram jadughorদেশভাগের পর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ১৯৪৭ সালে আশ্রমটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। ২০০৬ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে পুনরায় চালু করা হয় আশ্রমটির কার্যক্রম। এ আশ্রমের মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সেলাইসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গান্ধী আশ্রমের সেই সময়কার ঘরটিকে অক্ষত রেখে সেখানে সুতা তৈরির চরকা, গান্ধীর কিশোর থেকে শুরু করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নানা ছবি, গান্ধীর বাণী সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

পাশাপাশি মুক্তি সংগ্রামে বাঙালির বহুমাত্রিক ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস সংরক্ষণের মহৎ উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে একই আঙ্গিনায় গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর। প্রতিষ্ঠান দুটির নানা স্মৃতিচিহ্ন দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। এ গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে উঠেছে ইতিহাস শিক্ষার পাঠশালা।
mukti songram jadughorগান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরের ট্রাস্টি হিল্লোল সরকার জানান, দীর্ঘ ৬০ বছর পর ২০০৭ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে টাষ্ট্রি বোর্ডের মাধ্যমে ফের গড়ে তোলা হয় গান্ধী আশ্রম। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ‘মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর’। এর সাথে ধীরে ধীরে অবকাঠামোগত উন্নয়নও হচ্ছে এই গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরটির।

তিনি আরও বলেন, গান্ধী আশ্রমটি প্রতিষ্ঠারকালে অহিংসা ও সমাজ চেতনার কাজ করেছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় এখনও এই প্রতিষ্ঠানটি এই কাজ করে যাচেছ। এর সাথে নতুন প্রজন্মের সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন আলোকিত হতে পারে, সেই কাজটিও এখানে করা হচ্ছে। এখানে শুধু জামালপুর না, আশেপাশের বিভিন্ন জেলাসহ রাজধানী ঢাকা থেকেও সাধারণ দর্শণার্থীর পাশাপাশি বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ঘুরতে আসেন, জানতে আসেন।
mukti songram jadughorএ মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘরে ব্রিটিশ থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রামের নানা ছবি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক কালপর্ব ভিত্তিক ইতিহাস গ্যালারিও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ আশ্রম ও জাদুঘর দেখতে চলে আসছে শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থী। নিভৃত পল্লীতে গড়ে উঠা এ প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতিটি পরতে পরতে মিশে রয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং মুক্তি সংগ্রামের নানা গল্প। যা থেকে নতুন প্রজন্মের অনেকে এখানে এসে প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছে।

জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন বছরে অন্তত ৪০ হাজার দর্শনার্থী। তাদেরই একজন বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী মিতু আক্তার। তিনি বলেন, আগে আমাদের অনেক কিছুই অজানা ছিল। এখানে এসে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম। মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরটি না থাকলে হয়তোবা আমরা এসব জানতে পারতাম না।
mukti songram jadughorআরেকজন দর্শনার্থী খাদেজা বলেন, এখানকার পরিবেশটা অনেক সুন্দর। এখানে আসলেই ভালো লাগে। আমরা সময় পেলেই এখানে আসি। এখানে আসার পর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ছবি আর ইতিহাস গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে। আমরা অনেক কিছু জানতে পারি।

বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোলায়মান কবির বলেন, এই অজপাড়াগায়ের মতো একটি জায়গায় এমন একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের হতবাক করে তুলে। আসলে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা, চেষ্টা না থাকলে এটি করা সম্ভব ছিলো না। এই গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর এই অঞ্চলের নতুন প্রজন্মের ইতিহাস শিক্ষার পাঠশালা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পাঠশালা আমাদের দেশে আরও অনেকগুলো প্রয়োজন।
mukti songram jadughorগান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরের পরিচালক ও ট্রাস্ট্রি উৎপল কান্তি ধর বলেন, মুক্তি সংগ্রাম ইতিহাসকে মানুষ যেন না ভুলে না যায়, সে জন্যই এ জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। এই জাদুঘরটি পরবর্তীতে পুর্ণাঙ্গ একটি সংগ্রহশালায় পরিণত হবে। বাঙালির যে গৌরব-গাঁথা, ইতিহাস-সংগ্রাম ও আনন্দ-বেদনা রয়েছে, তা দেশবাসীর মধ্যে তুলে ধরবে। এসব দেখে তরুণ প্রজন্ম শিখবে এবং তাদের হৃদয়ে গেঁথে যাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। 

প্রতিনিধি/এইচই