জেলা প্রতিনিধি
১৯ জুলাই ২০২২, ০৩:৪৬ পিএম
আঠারো বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সুফিয়া বেগমের ছোট ছেলে শামসুল আলম। নাড়ি ছেঁড়া ধন হারানোর সেই কষ্টের মাঝে আবারও সড়কে ঝরল শেষ অবলম্বন বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলমসহ পরিবারের তিন জনের প্রাণ।
ভাগ্যের এ নির্মমতায় স্তব্ধ শারীরিক প্রতিবন্ধী সুফিয়া বেগম। বাবা-মাহারা তিন শিশুর ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা এখন জেঁকে বসেছে তার পরিবারে।
ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে যান ঢাকা মেইলের প্রতিবেদক। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় দেড়শ গজ দূরেই জাহাঙ্গীরের বাড়ি। মহাসড়ক থেকে সরু পথে নামতেই মনে হচ্ছিলো ওই এলাকার বাতাসে মুহুর্মুহু কান্নার আওয়াজ ভাসছে। ভাঙা টিন শেড ঘরের পাশ ঘেঁষে দেখা গেল, ছেলের কবরের এক কোণে বসে বিড়বিড় করে কাঁদছেন সুফিয়া।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবারটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার ইতিহাস বেশ পুরনো। এর আগেও মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরের ছোট চাচা ফজলুল হক, ২০০৪ সালে ছোট ভাই শামসুল আলমসহ গত কয়েক বছরে এই বাড়ির ১৭ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে বলে জানিয়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।
নিহত জাহাঙ্গীর আলমের চাচা জালাল উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীরের তিন দাদা মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। কয়েক বছর আগে তার ছোট ভাইও মারা যায়। সর্বশেষ শনিবার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে বউ-মেয়েসহ জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়।
সব হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারের নবজাতকের দিন কাটছে হাসপাতালে। শারীরিক প্রতিবন্ধী দুই বৃদ্ধের পরিবারে তিন শিশুর ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
জাহাঙ্গীর আলমের ছোট বোন মাহমুদা বলেন, পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিল বড় ভাই জাহাঙ্গীর। অভাব-অনটনের সংসার এক দোকানের আয়ে চলছিল। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ভাইটি চলে গেছে না ফেরার দেশে। রেখে গেছে তিন শিশু সন্তান আর শারীরিক প্রতিবন্ধী মা-বাবা। এখন এই পরিবার কীভাবে চলবে। কে নিবে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব।
তবে তাদের পাশে সাধ্যমতো থাকার কথা জানিয়েছেন ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান। তিনি জানান, পরিবারটিকে সহায়তা পাঠানো জন্য সোনালী ব্যাংকের ত্রিশাল শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়েছে। সুফিয়া আক্তারের জন্য একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে শিশুদের জন্য ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিবারটির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও শিশুদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা হবে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার ত্রিশালে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পথে ট্রাকচাপায় মারা যান দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না ও আড়াই বছরের মেয়ে সানজিদা। এ সময় মায়ের পেট ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় এক নবজাতক কন্যা শিশু। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে। এদিকে রাজু আহমেদ শিপন নামে ট্রাকচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ.ন.ম ইমরান খান।
প্রতিনিধি/এইচই/এএ