উপজেলা প্রতিনিধি
১৩ জুলাই ২০২২, ০৪:১৯ পিএম
সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরের উৎপাদনে থাকা ১৪০টি ট্যানারিতে এবারের কোরবানি ঈদ উপলক্ষে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১০ লাখ পিস। গত তিন দিনে সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার পিস চামড়া। তবে, চামড়া শিল্পনগর ঘিরে এবারও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা করছেন সেখানকার ট্যানারিশিল্প মালিকেরা।
তারা বলছেন, কোরবানির সময়ে ট্যানারিগুলোতে যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদিত হয়, তা অপসারণের সক্ষমতা নেই কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি)। এ কারণে এবারও তারা দূষণের শঙ্কায় রয়েছেন।
শিল্পমালিকেরা বলছেন, ঈদের ৭ দিনের মধ্যে বাইরে থেকে ঢাকায় চামড়া ঢোকার নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় আড়তদার ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়ায় লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করছেন। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যেই সেসব চামড়া সংগ্রহ ট্যানারিগুলোতে আনা হবে। বিভিন্ন ধাপে সেসব চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হবে।
বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ কমাতে পাঁচ বছর আগে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়া পরিশোধন কারখানা বা ট্যানারিগুলো সাভারের চামড়া শিল্পনগরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও পিছু ছাড়েনি ট্যানারি বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের ঘটনা। প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে ওই এলাকায় দূষণের পরিমাণ বেড়ে যায়।
ট্যানারি সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের দিন রোববার (১০ জুলাই) এখানকার ট্যানারিগুলোতে ৩ লাখ ৪৬ হাজার পিস চামড়া আসে যার বেশির ভাগই বিভিন্ন মাদরাসা এবং এতিমখানার সংগ্রহ করা রক্তমাখা কাঁচা চামড়া।
ঈদের দ্বিতীয় দিন সোমবার (১১জুলাই) চামড়া এসেছে ১৯ হাজার পিস। গতকাল ঈদের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত তিন হাজার ২০০টি চামড়া আসে ট্যানারিগুলোতে।
বুধবার (১৩ জুলাই) সরেজমিনে চামড়া শিল্পনগরে গিয়ে দেখা যায় চামড়া কম আসায় ব্যস্ততা নেই ট্যানারি শ্রমিকদের। কাজের ব্যস্ততা না থাকায় অলস সময় পার করছেন তারা। কেউ চায়ের দোকানে, কেউ বা ট্যানারির ভেতরে গল্পে মেতেছেন।
এ সময় কথা হয় ট্যানারি শ্রমিক সাইফুলের সঙ্গে। তিনি ঢাকা মেইলকে জানান, ঈদের দিন প্রচুর কাজের চাপ ছিল। গত দুইদিন যাবৎ কাজ অনেক কম, আজ একদমই নেই। তবে আগামী শনিবার থেকেই আবার চামড়া আসা শুরু করবে, তখন কাজের চাপও বেড়ে যাবে তাদের।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ট্যানারিগুলো মূলত লবণ দেওয়া চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। তবে ঈদের দিন সাভার ও আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তমাখা কাঁচা চামড়াও সংগ্রহ করা হয়। এরপর ট্যানারিতে সেগুলোতে লবণ মাখিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ঈদের সপ্তাহ খানেক পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লবণযুক্ত চামড়াগুলো দেশের আসবে ট্যানারিগুলোতে তখন এখানকার কর্মযজ্ঞ আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর কোরবানিতে পশু জবাই কম হওয়ায় চামড়ার সংখ্যা এবং এর দাম দুটোই কম ছিল। তবে এ বছর কোরবানিও অনেক বেশি হয়েছে। পাশাপাশি চামড়ার দামও ভালো যাচ্ছে। গত বছর যেসব চামড়ার দাম ছিল ৬০০ টাকা, এবার সেসব চামড়ার দাম সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
এদিকে চামড়া শিল্পনগরের ডাম্পিং ইয়ার্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চামড়ার কঠিন বর্জ্য ফেলার জন্য সেখানে গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ট্যানারি থেকে সেসব গর্তে ফেলা হচ্ছে চামড়ার কঠিন বর্জ্য। আর এভাবে উন্মুক্ত স্থানে এসব বর্জ্য ফেলায় সেখানকার বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ।
ট্যানারি সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সপ্তাহখানেক পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লবণযুক্ত চামড়া এখানকার ট্যানারিগুলোতে প্রক্রিয়াকরণের সময় বিপুল পরিমাণ তরল ও কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হবে। এসময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন তেমন চামড়া নেই, তাই শ্রমিকদের কাজের চাপ নেই পাশাপাশি তেমন বর্জ্যও নেই। তবে কদিন পর সারাদেশ থেকে চামড়া আসা শুরু করলে তখন পরিস্থিতি কি হবে তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কোরবানির সময়কার হিসেব একদমই আলাদা। কারণ এসময় ৬০ শতাংশের বেশি চামড়া সংগৃহিত হয়। একসঙ্গে এত বিপুল পরিমাণ চামড়া সংরক্ষণের প্রযুক্তি আমাদের এখানে এখনও আসেনি। ফলে এই চাপ সামাল দেওয়াটা মুশকিল। তাই দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিনিধি/এইচই