জেলা প্রতিনিধি
১৩ জুলাই ২০২২, ১২:০১ পিএম
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে একটি হলো গাদল খেলা। তবে কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এই খেলাটি।
গ্রামীণ এই খেলাধুলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং মাদক থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে নওগাঁয় আয়োজন করা হয় দুই দিনব্যপী ঐতিহ্যবাহী গাদল খেলার।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেলে সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চকবিক্রম এলাকায় শহিদ অধ্যাপক এস এম ফজলুল হক স্মৃতিতে ‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’ হাপানিয়া আঞ্চলিক কমিটি এই গাদল খেলার আয়োজন করে।
এসময় খেলা উপভোগ করতে হাজারো মানুষ ভীড় করে। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সীরাও উপভোগ করেন ঐতিহ্যবাহী এ খেলা।
খেলাটির জন্য ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের মাঠ থাকে। থাকে চারটি লাইনে মোট তিনটি ঘর (দাগ) কাটা। প্রতিটি দলে পাঁচজন করে খেলোয়াড় থাকে। মোট ২৫ মিনিট ধরে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
খেলা দেখতে আসা ইমদাদুল ইসলাম রনি বলেন, এত জাঁকজমকভাবে এ ধরনের প্রাচীন খেলা দেখতে পারবো ভাবতেই পারিনি। এ ধরনের খেলার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়। যুব সমাজ মাদক থেকে দূরে থাকবে।
সৈকত নামে এক ছাত্র বলেন, ছোটবেলা থেকে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার প্রচলন বেশি দেখে আসছি। তাই অন্য খেলার প্রতি আগ্রহ কম। নানা-দাদার কাছ থেকে হা-ডু-ডু, কানামাছি, লাঠিখেলার নাম শুনেছি। কিন্তু খেলার নিয়ম বা কৈশল জানা নেই। তবে এ ধরনের খেলা বেশি বেশি হলে আমরা নিয়ম বা কৈশল জানতে পারবো।
খেলা দেখতে আসা প্রায় শতবর্ষী আবেদ আলী বলেন, আমাদের বয়সে বউগুটি, গাদল, হা-ডু-ডু, বস্তা দৌড়, কানামাছি, মার্বেল খেলা খেলেছি। ৪০ বছর এই ধরনের খেলাধুলা করেছি। বিভিন্ন এলাকায় খেলাধুলাতে অংশও নিতাম। কিন্তু বর্তমানে এগুলো খেলা আর নেই। ছোট ছোট ছেলেরা পরিবারের হাল ধরতে শহরের দিকে কাজের জন্য চলে যায়। তিন বছর থেকে আমাদের এখানে এই খেলাটা হচ্ছে। খেলাটা দেখে খুবই ভালো লাগলো।
খেলা দেখতে আসা আরেক দর্শাণার্থী আব্দুল মান্নান মিলন বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার মধ্যে একটি হলো গাদল। এছাড়াও হা-ডু-ডু, কাবাডি, কানামাছি, লাঠি খেলা, পাতা খেলা আমরা দেখেছি। কালের বিবর্তনে এসব খেলা হারিয়ে গেছে। বর্তমান ছেলে মেয়েরা মোবাইলে ওপর আসক্ত হয়ে এই ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলো ভুলে যাচ্ছে। অনেক ছেলেমেয়েকে জিজ্ঞাসা করলে তারা হাডুডু, গাদল খেলা কী তা বলতে পারবে না। এসব খেলাধুলার মাধ্যমে যে সকল ছেলেমেয়েরা মোবাইল এবং মাদকের দিকে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা এসব থেকে বেরিয়ে এসে খেলাধুলার প্রতি আসক্ত হবে। তাদের মেধা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। তাই বেশিবেশি করে এসব খেলার আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
খেলার আয়োজক এম.এম রাসেল বলেন, গ্রামবাংলার মানুষের খেলাধুলা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মরা আজকে মাদক ও মোবাইলের ওপর বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের এ বয়সে শারীরিক কসরত, মাদক থেকে দূরে রাখতে নতুন প্রজন্মের কাছে এসব খেলাধুলা তুলে ধরার লক্ষ্যে এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এএ