জেলা প্রতিনিধি
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩০ পিএম
মেহেরপুরের গাংনীতে হঠাৎ করেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ ও সাধারণ জনগণ। একদিকে শৈত্যপ্রবাহ, অন্যদিকে ঘন কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, যানবাহন চালক ও পথচারীরা।
পৌষ মাসের শুরুতে শীতের তেমন তীব্রতা না থাকলেও মাসের মাঝামাঝি থেকে তা বাড়তে থাকে। তবে গত চার দিন ধরে জেলায় শুরু হয়েছে হাড় কাঁপানো শীত।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতবস্ত্রের অভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের কারণে গবাদিপশু নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়েছেন খামারিরা।

কনকনে শীতে কাজে যেতে পারছেন না অনেক শ্রমজীবী মানুষ। তবে পেটের তাগিদে কাউকে রিকশা, ভ্যান কিংবা খেত-খামারে দিনমজুরের কাজ করতে দেখা গেছে। মহাম্মদপুর গ্রামের দিনমজুর কালাম বলেন, যতই কুয়াশা আর শীত পড়ুক, মাঠের কাজে যেতেই হয়। কাজ না করলে মুখে ভাত উঠবে না। সেই সাথে রয়েছে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর চাপ।
গাংনী পৌর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, সকালবেলা শীতের পোশাক খুলতেই দুপুর ১২টা বেজে যায়। আজ তো শীতের পোশাক খোলার সাহসই পাইনি। একই কথা জানিয়েছেন আনোয়ারা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী মিনারুল ইসলাম।
গাংনী পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভ্যানচালক বুদু মিয়া জানান, প্রচণ্ড শীতে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। যাত্রী না থাকায় সারাদিন গাড়ি চালিয়েও ২০০–৩০০ টাকার বেশি আয় হচ্ছে না।
পাখিভ্যান চালক আবুল বাশার জানান, শীত লাগলেও কিছু করার নেই। পরিবারের জন্য দু’মুঠো ভাত জোগাড় করতে হলে কষ্ট করতেই হবে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীতে খেটে খাওয়া মানুষদের পাশাপাশি কৃষকরাও বিপাকে পড়েছেন। বোরো ধানের বীজতলায় বিশেষ যত্ন নিতে হবে। চারার ক্ষতি এড়াতে সকালে চারার মাথার শিশির ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং বীজতলায় ৩–৪ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মেহেরপুরে তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৬ শতাংশ। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা নেমে পৌঁছেছে ৮ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ। বর্তমানে জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে এবং আগামী কয়েকদিন তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ওই কর্মকর্তা।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আজিজ জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভুগছেন। হাঁচি, সর্দি, কাশি, হাঁপানি ও ডায়রিয়ার রোগী বাড়ছে। শিশুদের গরম পোশাক পরানো ও অপ্রয়োজনে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে সরকারিভাবে প্রাপ্ত কম্বলগুলো বিতরণ করা হয়েছে এবং অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রতিনিধি/এসএস