জেলা প্রতিনিধি
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১২ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক ভারত সফরকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসজুড়ে রহস্য ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, গত তিন মাসে অন্তত ১৩ জন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তা ভারতের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক ব্যক্তির এমন বিদেশ সফরকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাসে এখন নানা আলোচনা ও সন্দেহ চলছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ ডিসেম্বর ছুটি নিয়ে ভারতের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার চন্দন কুমার দাস। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কৌশলে নিজের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ না করেই ভারত সফরে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এনওসি প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক হলেও তার ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভারতে তার নিজস্ব বাড়ি রয়েছে।
সূত্র জানায়, সাধারণত বিদেশ সফরের আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা শিক্ষকের এনওসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু চন্দন কুমার দাসের ক্ষেত্রে সেটি দেখা যায়নি। পরিকল্পিতভাবেই বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে, যা ভিন্ন কোনো ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, চন্দন কুমার দাস বিগত প্রশাসনের সুবিধাভোগী চক্রের অন্যতম সদস্য। বর্তমানেও তিনি পদোন্নতি, বিদেশ সফর ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণে সক্রিয় রয়েছেন। এতে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ শাসনামলে সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগসাজশে নিয়োগ বাণিজ্য, ট্রেনিং প্রোগ্রাম, কেনাকাটা ও সম্মানীর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে চন্দনের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতির ক্ষেত্রে বহিরাগত বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ও তাদের আবাসিক হোটেলের ভাড়া দেখিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে। কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ ও পদোন্নতি বোর্ডে থাকাকালীন কম্পিউটার টেস্টের নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া অর্গানোগ্রাম প্রণয়নের অজুহাতে প্রতি মাসে তিন থেকে চারবার ভারত ভ্রমণ দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টিএ/ডিএ উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে তার নামে।
এর আগে ফাঁস হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট ঘিরে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, মালি পদে নিয়োগের বিনিময়ে অর্থ লেনদেনের সঙ্গে চন্দন কুমার দাস জড়িত ছিলেন। স্ক্রিনশট অনুযায়ী, তিনি সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমানের মাধ্যমে রশিদ নামের এক চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগ নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তখন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার দাস বলেন, ‘আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছি, অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।’
আইসিটি সেলের পরিচালক প্রফেসর ড. শাহজাহান আলী বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মে এনওসির কপি আমাদের কাছে আসলে আমরা তা ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেই। তবে তার এনওসির কোনো কপি আমাদের অফিসে আসেনি।’
সম্প্রতি জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিযুক্তদের তালিকায় আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন যারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সুযোগ পেলে তারাও বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
প্রতিনিধি/একেবি