images

সারাদেশ

৪০ বছর ধরে সাইকেলে পশুর ওষুধ বিক্রি করেন আব্দুল আজিজ

জেলা প্রতিনিধি

৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি, সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে রাখা ব্যাটারি, সামনে ঝোলানো হ্যান্ড মাইক আর ব্যাগভর্তি হাঁস, মুরগি ও কবুতরের নানা রোগের ওষুধ এই তার নিত্যসঙ্গী। প্রায় চার দশক ধরে নড়াইলের গ্রামে গ্রামে ঘুরে এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন ৬৫ বছরের আজিজ শেখ।

আব্দুল আজিজ শেখের আদি বাড়ি সাতক্ষীরায়। প্রায় ৪০ বছর আগে কাজের সন্ধানে নড়াইলে আসেন। শুরুতে শহরের ভওয়াখালী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর বর্তমানে সদর উপজেলার উজিরপুর গ্রামে পাঁচ শতক জমি কিনে টিনের ঘরে বসবাস করছেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার চার সদস্যের সংসার।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে নড়াইল সদর উপজেলার আগদিয়া গ্রামে কথা হয় আব্দুল আজিজের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল ছয়টার দিকে বাড়ি থেকে বের হই। কোনো দিন আটটা, কোনো দিন নয়টার আগে ফিরি না। ওষুধ নিজেই বানাই, নিজেই বিক্রি করি। হাঁস, মুরগি, কবুতর আর মানুষের চুলকানির ওষুধও রাখি।

যশোর ও সাতক্ষীরা থেকে কাঁচামাল কিনে এনে নিজের হাতে ওষুধ তৈরি করেন আব্দুল আজিজ। বহু বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘোরার কারণে অধিকাংশ মানুষই তাকে চেনেন। ভালোবাসা ও বিশ্বাস থেকেই অনেক খামারি তার কাছ থেকে ওষুধ কেনেন বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

স্কোয়াশ চাষে লাভবান বাহুবলের কৃষক সানু মিয়া

আব্দুল আজিজ বলেন, একসময় তার ব্যবসা ভালোই চলত। ২০-২৫ বছর আগে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার ওষুধ বিক্রি হতো। এখন দোকানে নানা কোম্পানির ওষুধ আসায় চাহিদা কমে গেছে। বর্তমানে তার দৈনিক আয় গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এই আয়ে কোনোমতে চলে সংসার। বড় ছেলে আলামিন শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। স্ত্রী সংসারের কাজ সামলান। আব্দুল আজিজ বলেন, অনেক কষ্ট করে পাঁচ শতক জমি কিনতে পেরেছি। সরকারি একটা ঘর পেলে শেষ বয়সটা একটু শান্তিতে কাটাতে পারতাম।

গ্রামে ঢুকলেই আব্দুল আজিজের সাইকেলের মাইকে ভেসে আসে পরিচিত ঘোষণা। সেই শব্দ শুনেই বাড়ির আঙিনা থেকে বেরিয়ে আসেন হাঁস-মুরগি পালন করা নারীরা। কারও মুরগি অসুস্থ, কারও হাঁস খাওয়া বন্ধ করেছে, আবার কারও কবুতরে রোগ সব সমস্যার সমাধানে তাদের প্রথম ভরসা আব্দুল আজিজ।

আগদিয়া গ্রামের স্বপ্না বিশ্বাস বলেন, ‘হাঁস মুরগির কোনো সমস্যা হলে আব্দুল আজিজ ভাইয়ের ওষুধে ঠিক হয়ে যায়। তাই তার ওষুধ আমরা কিনে ঘরে রেখে দি। হাঁস মুরগির কোনো রকম সমস্যা হলে আমরা তার ওষুধ ব্যবহার করি।

শিমুলিয়া গ্রামের আরেক খামারি মফিজ শেখ। তিনি বলেন, আব্দুল আজিজের তৈরি ওষুধ মুরগির খাওয়ালে রোগ ঠিক হয়ে যায়। এ গ্রামের সবাই হাঁস, মুরগি, কবুতর পালনে তার তৈরি ওষুধ ব্যবহার করেন।

প্রতিনিধি/এসএস