images

সারাদেশ

হিন্দুত্ববাদ বা ধর্মের নামে রাজনীতি চাই না: ইঞ্জি. তুহিন

জেলা প্রতিনিধি

২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম

‘হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে আমরা যেমন বিশ্বাস করি না, তেমনি ইসলামের নাম ব্যবহার করে কেউ রাজনীতি করুক সেটাও আমরা চাই না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাসী। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে আদর্শে বিশ্বাস করতেন, আমরাও সেই আদর্শেই আস্থাশীল।’

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে নীলফামারী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ইঞ্জিনিয়ার শাহরীন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। এ সময় নীলফামারীর বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ইঞ্জিনিয়ার তুহিন বলেন, ‘আমরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে নীলফামারী জেলাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। আমরা এমন রাজনীতিতে বিশ্বাস করি যেখানে জেলার উন্নয়নই হবে মূল পরিচয়।’ সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের লেখনির মাধ্যমেই সত্য ও সম্ভাবনা মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। আপনাদের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নীলফামারী জেলাকে আরও এগিয়ে নিতে পারে। রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরা যেমন চেষ্টা করছি, আপনারাও আপনাদের কলমের শক্তি দিয়ে জেলাকে সমৃদ্ধ করতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলার মানুষের স্বার্থে কিছু মৌলিক বিষয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঢাকায় কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের এলাকার লোকজন সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের এলাকায় সেই সংস্কৃতি তুলনামূলকভাবে কম। আমি ব্যক্তিগতভাবে এলাকার মানুষের জন্য বিভিন্ন জায়গায় লবিং বা তদবির করি; আমাদের সবার মধ্যেই এই সহযোগিতামূলক মানসিকতা থাকা উচিত।’

এলাকার মানুষের পারস্পরিক সহায়তার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘সিলেট, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের অনেক মানুষ বিদেশে, বিশেষ করে লন্ডনে স্থায়ী হয়েছেন এবং ক্রমান্বয়ে তারা নিজেদের এলাকার মানুষদেরও সেখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের জেলা থেকে এমন নজির খুব কম। আমাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে একে অপরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’

ডিজিটাল উন্নয়ন প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার তুহিন বলেন, ‘আমরা এখনো প্রকৃত অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে আছি। বিগত সরকার বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল’ বা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বললেও বাস্তবে আমাদের জ্ঞান ও প্রযুক্তির অনেক ঘাটতি রয়েছে। চীন ব্যাপক উন্নয়ন করা সত্ত্বেও নিজেদের ‘ডিজিটাল চায়না’ বলে দাবি করে না। একটি দেশকে প্রকৃত ডিজিটাল বলতে হলে শুধু রাস্তাঘাট নির্মাণ করলেই হয় না, প্রয়োজন উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড সেবা। আজও আমরা ঘরে ঘরে ব্রডব্যান্ড পৌঁছাতে পারিনি, এমতাবস্থায় দেশকে ডিজিটাল বলা কতটা যৌক্তিক?”

তিনি আরও যোগ করেন, ‘ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু নীলফামারী জেলা এবং এই রাষ্ট্র আমাদের সবার। বাংলাদেশকে উন্নত করতে হলে সাধারণ কিছু মৌলিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জিডিপি এখন অনেক বড়। এই সম্পদ ও অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশ দ্রুতই সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।’

মতবিনিময় সভায় নীলফামারী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও নীলফামারী-১ আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে নেতৃত্ব প্রয়োজন, সেই প্রশ্নে আমরা সবাই একমত। নেতিবাচক বক্তব্য দিয়ে আমরা দলকে বিভ্রান্ত করতে চাই না কিংবা অগ্রযাত্রার পথকে সংকুচিত করতে চাই না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ‘ধানের শীষ’কে জয়ী করতে চাই। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা একটি আধুনিক নীলফামারী গড়ে তুলতে পারবো।’

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, নীলফামারী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আল মাসুদ চৌধুরী, নীলফামারী প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিয়ার রহমান বাড্ডা, সাধারণ সম্পাদক নুর আলম, সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আলম সিয়াম ও তাহমিন হক ববি, এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান রাব্বি প্রধানসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী এবং বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

প্রতিনিধি/একেবি