জেলা প্রতিনিধি
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫২ এএম
পৌষের হাড়কাঁপানো শীত আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রকৃতিতে মুন্সিগঞ্জের জনপদ এখন যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস। কনকনে শীত থেকে বাঁচতে আর পরিবারের জন্য উষ্ণতার খোঁজে জেলার সদর উপজেলাসহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে নকশী কাঁথা সেলাইয়ের ব্যস্ততা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে গ্রামের নারীরা দলবেঁধে বাড়ির উঠানে বা রোদেলা আঙিনায় বসে নিপুণ হাতে সুঁই-সুতোয় ফুটিয়ে তুলছেন বাহারি নকশা। শুধু শীত নিবারণের মাধ্যম হিসেবেই নয়, বরং বাঙালির শত বছরের ঐতিহ্য আর শৈল্পিক ছোঁয়ায় মুন্সিগঞ্জের প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে এই সূচিকর্ম। কেউ নতুন অতিথির জন্য, কেউবা মেয়ের বিয়ের উপহার হিসেবে পরম মমতায় বুনে চলেছেন লতাপাতা, ফুল আর রঙিন সুতোর স্বপ্নিল সব গল্প।
গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূ ও তরুণীরা সংসারের দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন কাঁথা তৈরি নিয়ে। পুরনো কাপড় আর সুঁই-সুতা এখন তাদের অবসর সময়ের সঙ্গী। শিল্পকলার হাজার বছরের নিদর্শন প্রাচীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে সুচিশিল্পটি।
পুরনো বস্ত্রখণ্ডে তৈরি কাঁথায় বিচিত্র নকশা খচিত করার রেওয়াজ এক সময় ছিল গ্রাম-বাংলার প্রতিটি পরিবারের ঘরে ঘরে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব কিছুই বদলে দিচ্ছে অভিযোগ বর্তমান প্রজন্মের তরুণীদের।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে মুন্সিগঞ্জ সদরের বিভিন্ন গ্রামে সরজমিনে দেখা যায়, কাঁথা তৈরির ধুম পরে গেছে বসত বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা খোলা মাঠে।
সুঁই-সুতাই এখন যাদের অবসর সময়ে সঙ্গী সেই কাঁথা শিল্পের সঙ্গে জড়িত গৃহবধূ সুচিতা রায়, মৌসুমী, টুম্পা, কাকলি বেগম ও কলেজ পড়ুয়া তরুণী লাবণ্যের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তারা জানান, তাদের তৈরি নকশি কাঁথাগুলো খুবই নজরকাড়া। কম্বলের আধিপত্যে এই কাঁথা শিল্পে কিছুটা ভাটা পড়লেও পরম্পরার ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছেন অনেকেই। শীতের সকালে রোদের বসে বা বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই নাওয়া-খাওয়া সেরে বয়স্ক, গৃহবধূ ও তরুণীরা পুরনো কাপড় আর সূই-সুতা নিয়ে বসে পড়েন বাড়ির উঠোনে, ঘরের মেঝে এবং খোলাস্থানে। শুধু ব্যবহারের জন্য নয়, এ শিল্পকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে জীবিকা ও নির্বাহ করে চলছে অসংখ্য পরিবার। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ বলে মনে করছেন তরুণ নারী উদ্যোক্তারা।
শম্পা রানী পাল নামের এক গৃহবধূ বলেন, নকশি কাঁথা তৈরি করে এই শীত মৌসুমে এদিক থেকে যেমন অবসর সময় কেটে যাচ্ছে, অন্যদিকে বাড়তি আয়ের ও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের।
শ্রাবণী আক্তার বিথী নামের এক তরুণী ও নারী উদ্যোক্তা বলেন, এক একটি কাঁথা প্রস্তুত করতে সময় লাগছে চার থেকে পাঁচদিন। স্বল্প খরচে তৈরি করা এসব নকশী কাঁথা বিক্রি হয় ভালো দামে। একটি কাঁথা তৈরিতে তিন থেকে সাড়ে চারশ টাকা খরচ হলেও বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। মান ভেদে আরও বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। এতে ভালো আয় হচ্ছে আমাদের।
চম্পা নামের আরও এক গৃহবধূ বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্প অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। শীত মৌসুমে কাঁথা তৈরি করে আমাদের ভালো আয় হচ্ছে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা কাঁথা তৈরি করে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন
নারীদের কর্মমুখী উদ্যোগ ও জীবন উন্নয়নে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে দাবি করে জেলা প্রশাসক সৈয়দা নুরমহল আশরাফী বলেন, যে কোনো কর্মক্ষেত্রে নারীর উন্নয়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছে সরকার। আগামীতে ও এটি চলমান থাকবে। এই শিল্পের টিকিয়ে রাখতে সব সময় সহযোগিতা করা হবে।
প্রতিনিধি/টিবি