জেলা প্রতিনিধি
২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম
কুমিল্লার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হলো কুমিল্লা-৬ (সদর) সংসদীয় আসনটি। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা, কুমিল্লা ইপিজেড, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে এই আসনটি গঠিত। এই গুরুত্বপূর্ণ আসন থেকে কুমিল্লার ১১টি আসনের সামগ্রিক রাজনীতি নির্ধারিত হয়। বিএনপির প্রয়াত পাঁচবারের এমপি সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল আকবর হোসেন মারা যাওয়ার পর এই আসনটি দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা বিএনপিতে সবচেয়ে বেশি কোন্দলে জর্জরিত। কুমিল্লা সদর ৬ আসনে সাবেক বিএনপি নেতা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের
দুইবারের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লার রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর। সাক্কুর সহজ সরল কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেয়ার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণ যোগ্যতা অনেক বেশি। সাধারণ মানুষের সাথে সহজে মিশে যাওয়ার কারণে কুমিল্লায় তার ভালো ভোটব্যাংক রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে এবার মনোনয়ন না দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীকে এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
![]()
এদিকে, গত ২৬ অক্টোবর ঢাকার গুলশানে তার বাসভবনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সঙ্গে বৈঠক করে সদর আসনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দুইবারের নির্বাচিত সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মো. মনিরুল হক সাক্কুকে ডেকে নেন। তিনি সাক্কুর কাছে কুমিল্লার রাজনীতির অবস্থা জানতে চান এবং কুমিল্লা সদর-৬ সংসদীয় আসনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া যায়, সে বিষয়ে জানতে চান।
বিএনপির মহাসচিবের এই প্রশ্নের উত্তরে কুমিল্লার সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সদর আসন থেকে হয় আমাকে মনোনয়ন দিন, না হয় মনিরুল হক চৌধুরী ভাইকে মনোনয়ন দিন। তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, কুমিল্লা সদরের-৬ আসনটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে উপহার দেব।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন সাক্কুকে আশ্বস্ত করে বলেন, তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে তার কথাটি জানাবেন। তার ধারাবাহিকতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রবীণ রাজনীতিবিদ তিনবারের সাবেক সাংসদ মনিরুল হক চৌধুরীকে সদর আসন থেকে বিএনপি নমিনেশন দেয়। অপরপক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন মনোনয়ন না পেয়েও এখন পর্যন্ত গণসংযোগ ও দলীয় কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
![]()
এদিকে রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মু. রেজা হাসান কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মনিরুল হক সাক্কুর প্রতিনিধিরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মাস্টার, অজিত গুহ কলেজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মিঠু, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আজাহার উদ্দিন বাপ্পি, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কবির হোসেন মজুমদার, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইকরাম হোসেন ইকু ও আব্দুল হালিম এবং যুবদল নেতা জুয়েল রানা।
মনোনয়ন সংগ্রহ করার ব্যাপারে মনিরুল হক সাক্কু রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে বলেন, আমি ৪৭ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছি। এখন যারা বিএনপির নামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন তাদের রাজনীতির বয়স আমার রাজনীতির বয়সের তিন ভাগের একভাগও হবে না। আমি রুট লেভেল থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি প্রথমে কুমিল্লায় ছাত্রদল, যুবদল এবং বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছি।
মনোনয়ন ফরম কেনা প্রসঙ্গে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, মনোনয়ন কিনতে সমস্যা কোথায়? আমি এখনও মনিরুল হক চৌধুরী ভাইয়ের জন্যই ভোট চাচ্ছি। তিনি দলের একজন ত্যাগী নেতা। দল যোগ্যতম একজন প্রার্থীকে বিএনপি থেকে নমিনেশন দিয়েছেন। আমি ২৭টি ওয়ার্ডসহ পুরো কুমিল্লা ৬ সদর আসন এক বছরের বেশি সময় ধরে গণসংযোগ করেছি। হাজি ইয়াছিনের চেয়েও বেশি মাঠে কাজ করছি। আজ সকালে প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি, তবে জমা দেব নিজে গিয়ে। আমার মনোনয়ন সংগ্রহ করা একটি রাজনৈতিক কৌশল।
![]()
তিনি আরও বলেন, হাজি ইয়াছিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার জনপ্রিয়তার পরীক্ষা হয়ে যাবে।
সাক্কুর ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, মনোনয়ন ফরম কেনা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। দলীয় মনোনয়ন না পেলে কী করব, তা দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরই জানাব।
কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, মনোনয়ন ফরম কেনা সাক্কুর নিজস্ব কৌশল হতে পারে। এটুকু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, তিনি এখনও আমার পক্ষেই মাঠে কাজ করছেন।
প্রতিনিধি/এসএস