জেলা প্রতিনিধি
০৮ জুলাই ২০২২, ০৬:৪৭ পিএম
পবিত্র কোরবানি ঈদ উপলক্ষে শেরপুর জেলার মোট ২৭টি পশুর হাট বসছে। ইতোমধ্যে পশুর হাটে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। হাটগুলোয় অন্তত ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন বাড়িতে ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামারগুলোতে ঈদ সামনে রেখে দেশি, শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান, হলিষ্টিক ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়ালসহ বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। তবে চাহিদামতো দাম না ওঠায় এখনও বিক্রি হয়নি অনেক ষাঁড়।
এদিকে শেরপুরের যেগুলো গরু বাজারে তোলা হচ্ছে, ‘দাম চাচ্ছে বেশি’ —এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। এ কারণে হতাশ হয়ে গরু না কিনে বাড়ি ফিরছেন কেউ কেউ। অপরদিকে বিক্রেতাদের দাবি, চড়া দামে গো-খাদ্য ক্রয় করে কোরবানীর গরু পালনে এবার খরচ হয়েছে বেশি। তাই দর গেল বারের চেয়ে একটু বেশিই। গরু বিক্রি কম হওয়ায় হতাশ বাজারের ইজারাদারেরাও।
সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনীমুড়া গ্রামের উজ্জ্বল আহম্মেদ গরু বিক্রি করতে এসেছেন নৌহাটা পৌর গরুর হাটে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, এবার অনেক কষ্ট করে বেশি দামে গরুর খাদ্য কিনে গরু পালন করেছি। আমগরে খরচ অইছে বেশি। তাই সঠিক দাম না পাইলে আমাগো লোকসান অইবো।
এদিকে শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের ক্রেতা শাহ কামাল মিয়া বলেন, এবার আগেভাগেই গরুর হাটে আসছিলাম গরু কেনার জন্য। কিন্তু দাম অনেক বেশি চাইছে তারা। তাই আজ গরু কিনলাম না। পরের হাটে দেখব।
পৌর শহরের মোবারকপুর মহল্লার জিয়া সরকার নামে আরেক ক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, শেষ দিকে কম দামে গরু পাওয়া যাবে। তাই আমরা গরু দেখে গেলাম। শেষের দিন কিনব।
পৌর এলাকার মোবারকপুর মহল্লার মাস্টার ডেইরি ফার্মের মালিক মুশফিকুর রহমান বলেন, গোখাদ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। সব কিছুর দাম বাড়লেও দুধের দাম তেমন বাড়েনি। এর মধ্যে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের ভোগাচ্ছে।
জেলা গরুর খামার মালিক সমিতির সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান পাপ্পু ঢাকা মেইলকে বলেন, জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে কোরবানির গরু মজুদ রয়েছে। তবে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারীদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এখন যদি ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকে তাহলে খামারীরা লোকসান গুণবেন। এতে খামারীরা তাদের আগ্রহ হারাবেন। এমনিতেই করোনায় গত দু বছর তারা লোকসান গুনেছেন। এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি ঢাকা মেইলকে জানান, শেরপুরের গরুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও রোগাক্রান্ত পশু যাতে ক্রয় বিক্রয় না হতে পারে সেজন্য ছয়টি টিম জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করছে।
শেরপুর জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাটে আসে। একই সাথে কোনো অসুস্থ গরু যাতে বাজারে ক্রয় বিক্রয় না করে এজন্য মানুষকে সচেতন করছি। আমাদের ছয়টি টিম ঘুরে ঘুরে দেখে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে কাজ করে যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে প্রচুর সংখ্যক কোরবানির গরু বাজারে উঠতে শুরু করেছে এবং দামও সহনশীল পর্যায়ে থাকবে বলে ধারণা করছি।
তিনি আরও জানান, জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ৫৫ হাজারের কিছু বেশি। আর আমাদের প্রস্তুতকৃত পশু রয়েছে প্রায় ৮৩ হাজার। আমরা হাটে সরাসরির পাশাপাশি অনলাইনেও কেনাবেচার ব্যবস্থা রেখেছি। অনলাইনের গরু বিক্রির ৬টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সুতরাং ক্রেতারা অফলাইন ও অনলাইন দু’মাধ্যমেই স্বাচ্ছন্দ্যেই তাদের কোরবানির পশু কিনতে পারবেন। এবার জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পশু বেচা-কেনা হবে বলে আশা করছি আমরা।
প্রতিনিধি/এএ