images

সারাদেশ

নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ, দেড় বছরের কাজ ৮ বছরেও শেষ হয়নি

১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৭ পিএম

নকশা জটিলতায় ৬৫ কোটি টাকার সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা যা মূল ব্যয়ের দ্বিগুণেরও বেশি। নড়াইলের কালিয়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ‘বারইপাড়া সেতু’র কাজ দেড় বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ৮ বছরেও তা সম্পন্ন হয়নি। সেতুর কাজে এমন দীর্ঘসূত্রতায় চলাচলের ভোগান্তি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় এলাকাবাসী।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের এই পিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণে প্রাথমিক চুক্তি মূল্য ছিল ৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু বারবার মেয়াদ বৃদ্ধি ও নকশা পরিবর্তনের কারণে বর্তমান নির্মাণ ব্যয় ঠেকেছে ১৩৫ কোটি ৯২ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। বছরের পর বছর কাজ চললেও সেতুটি কবে নাগাদ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন স্থানীয়রা।

সড়ক পথে নড়াইল সদরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলাসহ অন্তত তিনটি জেলার যোগাযোগ সহজ করতে ২০১৮ সালে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সবশেষ চলতি বছরের সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে নদীর দুই তীরের সংযোগ সড়কসহ ১১টি পায়ার ও ১১টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে মাঝনদীর ৩টি পিলার ও ৩টি স্টিল স্প্যান বসানোর কাজ এখনও বাকি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এই অঞ্চলে কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য শহরে নিতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া এলাকায় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে পুলিশ সময়মতো আসতে পারে না; আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস কিংবা জরুরি রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত পৌঁছাতে পারে না। খেয়াঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় সাধারণ মানুষকে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের জিলহজ খান বলেন, “প্রায় ৮ বছর ধরে সেতুর কাজ চলছে, কিন্তু শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই। আমরা খুবই ভোগান্তিতে আছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পারাপার হতে হয়। ব্রিজটি দ্রুত চালু হলে আমাদের কষ্ট দূর হতো।”

n

মাধপপাশা গ্রামের ডা. অসীম কুমার অধিকারী বলেন, ‘বারইপাড়া সেতুটি নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ৮ বছর পার হলেও তা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। আমাদের স্বপ্ন কি তবে দুঃস্বপ্নই থেকে যাবে? সেতুটি চালু হলে কালিয়াবাসী নড়াইল সদরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দারুণভাবে উপকৃত হতো।’

জানা গেছে, ২০১৮ সালে প্রথম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স জামিল ইকবাল অ্যান্ড মঈনুদ্দিন বাঁশি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি’ ৬৫ কোটি টাকায় কাজটি শুরু করে। বাল্কহেডের ধাক্কায় ৯ নম্বর পিলারটি দুইবার নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর মূল অংশের ৪টি পায়ার ও ৩টি স্প্যান অসম্পূর্ণ রেখেই ৬১ কোটি টাকা তুলে নিয়ে কাজ শেষ করে তারা। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদে ‘কংক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজিস্ট লিমিটেড’ বাকি অংশের কাজ পায়।

বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ৮৬ দশমিক ৭৩ মিটার স্টিল আর্চ স্প্যানসহ আরও দুটি স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ খান লিটন বলেন, ‘কিছু জটিলতার কারণে স্টিল স্প্যান বিদেশ থেকে আনতে দেরি হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে দুটি স্প্যান বসানো শেষ হবে। আশা করছি, নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই মাঝখানের আর্চ স্প্যানটি বসিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে সেতুটি হস্তান্তর করতে পারব।’

lk

নড়াইল জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম জানান, নকশার ত্রুটি সংশোধন করে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করে সেতুটি জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রতিনিধি/একেবি