জেলা প্রতিনিধি
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১১ এএম
হাসিমুখে পরিবারের কাছে বলেছিলেন, ‘আর একটু কষ্ট করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’ সেই আশার কথা আজ শুধুই স্মৃতি। ঘরের কোণে বসে মা তাকিয়ে থাকেন ফাঁকা দরজার দিকে, আর বাবা নামাজের জায়নামাজে চোখের পানি লুকান। অভাব ঘোচানোর যে স্বপ্ন নিয়ে নাঈম ইসলাম শান্ত (২৫) দেশ ছেড়েছিলেন, তা শেষ পর্যন্ত প্রবাসেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
নিহত নাঈম শরীয়তপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মাহমুদপুর গ্রামের এনামুল হক মাদবর ও তাজিয়া বেগম দম্পতির ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, পরিবারের আর্থিক সংকট দূর করতে প্রায় তিন বছর আগে ২০ লাখ টাকা ঋণ করে তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। জীবন বাজি রেখে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এক বছর আগে ইতালিতে পৌঁছান নাঈম। সেখানে শুরু হয় তার কঠিন সংগ্রামের জীবন।
ইতালির নেপোলি শহরের একটি ক্যাম্পে বসবাস করে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন তিনি। হালাল রুজির আশায় দিন-রাত পরিশ্রম করতেন। অল্প আয়ের মধ্যেও নিয়মিত পরিবারের খোঁজখবর নিতেন এবং সামান্য হলেও টাকা পাঠাতেন।
কিন্তু সেই স্বপ্ন থেমে যায় মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে। কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে নেপোলি শহরের এক এলাকায় তাকে হত্যা করা হয়।
পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারী দীর্ঘদিন ধরে নাঈমকে হয়রানি করে আসছিল। ঘটনার রাতে টাকা ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশে তাকে গাড়িচাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে মৃত্যুর খবর দেশে পৌঁছালে দক্ষিণ মাহমুদপুর গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের আহাজারি ও প্রতিবেশীদের স্তব্ধতায় পুরো এলাকা ভারী হয়ে ওঠে। কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না-যে ছেলেটি ছিল পরিবারের শেষ ভরসা, সে আর কোনোদিন ফিরবে না।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
নিহতের ভাই বাপ্পি মাদবর বলেন, ‘আমার ভাই কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলায় জড়িত ছিল না। সে শুধু কাজ শেষে বাসায় ফিরছিল। আল্লাহই ভালো জানেন কেন এমন হলো। আমরা দুনিয়ার আইনে বিচার চাই এবং আল্লাহর দরবারে ন্যায়বিচার কামনা করি।’
চাচাতো ভাই আল-ইমরান বলেন, ‘প্রবাসে আমাদের ছেলেরা নিরাপদ নয়। ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হলো।’
বৃদ্ধ বাবা এনামুল হক মাদবর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আল্লাহ যা করেন, নিশ্চয়ই তার মধ্যে হিকমত আছে। তবুও বাবা হিসেবে একটাই চাওয়া-মরার আগে ছেলের মুখটা একবার দেখতে চাই। সরকার যেন তার লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করে।’
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন পেলে মরদেহ দেশে আনা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।’
প্রতিনিধি/এমআই