জেলা প্রতিনিধি
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১৮ পিএম
সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে ৭ বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান কবির। সেখানে কে সেল নামে এক কোম্পানিতে গার্ডের চাকরি করতেন। এরপর ২ বছর আগে ছুটিতে বাড়ি আসেন প্রবাসী কবির। ছুটি কাটিয়ে আবারও মালয়েশিয়ায় কাজে ফিরে যান তিনি। আগামী ১ জানুয়ারি দেশে ফেরার কথা ছিল কবিরের। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে স্ত্রী ও এক ছেলের কাছে ফিরবেন তিনি। কিন্তু সে ফেরা তার আর হলো না। মালয়েশিয়ার চামান্ডা উতিরাম এলাকার দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন নাটোরের বড়াইগ্রামের ছেলে প্রবাসী কবির হোসেন।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে বড়াইগ্রামে পরিবারের কাছে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছালে পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় এলাকার আত্মীয়-স্বজন খবর পেয়ে নিহতের বাড়িতে ছুটে আসেন। তাদের আহাজারি আর কান্নায় স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা।
নিহত কবির হোসেন নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কয়রাগ্রামের বাসিন্দা। পরিবারে স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে তার।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেন কবির। এরপর মালয়েশিয়ায় একটি জারখানার গার্ড হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২ বছর আগে ছুটিতে বাড়ি আসেন কবির। সামনে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে দেশে ফেরার কথা ছিল তার। মালয়েশিয়ার কে সেল কারখানার দ্বিতীয় গেটে গার্ডের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। রাত ৯টার দিকে বাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয় প্রবাসীর। এরপর রাতে কারখানায় দায়িত্বরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন তিনি। রাত ৩টার দিকে পরিবারের কাছে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছায়।

নিহত কবিরের একমাত্র ছেলে সোহান হোসেন বলেন, আমার বাবার সামনের মাসে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। অনেক আশায় ছিলাম আমরা, বাবা বাড়িতে আসবে। কিন্তু সেই আনন্দ শেষ হয়ে গেল। গতরাতে ডিউটিরত অবস্থায় আমার বাবাকে কে বা কারা খুন করেছে। কেন আমার বাবাকে খুন করা হলো, আমি তার বিচার চাই। আমার বাবার লাশ যেন দ্রুত আমাদের কাছে পাঠানো হয় সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্ত্রী শিউলি বেগম বলেন, আমার স্বামীর কত স্বপ্ন ছিল সে দেশে ফিরবে। সেজন্য সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাত ৯টায় আমাকে ফোন করেন, আমার বুকে ব্যথায় কথা বলতে পারিনি। ব্যথা কমলে ফোন দিতে বলেছিল আমার স্বামী। পরে কল দিলে আর পাইনি। আমার স্বামীকে কে মারল, এমন শক্র কে? তার বিচার চাই।
বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমরা শোকাহত এবং নিহতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছি। যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন তার পরিবারের পাশে থাকবে। শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।
প্রতিনিধি/এসএস