images

সারাদেশ / শিক্ষা

চাকসু জিএসর বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করলো এজিএস

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৯ এএম

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) বক্তব্য এবং শাখা ছাত্রদল কর্তৃক ক্যাম্পাসে বহিরাগত দলীয় কর্মী এনে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)। তবে, বিবৃতিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন চাকসুর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) আইয়ুবুর রহমান তৌফিক। 

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর রাত ৩টার দিকে চাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সাঈদ বিন হাবিব স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিটি চাকসুর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয়। 

বিবৃতিতে লেখা হয়, গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মাননীয় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে যেভাবে দায়মুক্তি দিয়েছেন তা অনভিপ্রেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল জায়গায় থাকাবস্থায় যে-কোনো বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের আরও বেশি যত্নবান হওয়া উচিত।”

১৫ ডিসেম্বর (সোমবার) এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার ভবনের কাজের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির শিকার হয়। এক পর্যায়ে চাকসু নেতৃবৃন্দ এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিতে উপস্থিত ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে আহ্বান করেন। কিন্তু ছাত্রদল নেতারা চাকসু নেতৃবৃন্দের সাথে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

এক পর্যায়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের উপস্থিতিতে সংঘাতময় পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়। অন্যদিকে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে বহিরাগত যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো করে এবং নানা ধরনের উগ্র স্লোগান দিতে থাকে, যা পরিস্থিতিকে ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত করে তোলে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের নিয়ে এসে ছাত্রদল যে ঘৃণ্য সংস্কৃতির সূচনা করল তা কোনোভাবে কাম্য নয়।

ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ সব ছাত্রসংগঠনকে ভবিষ্যতে ক্যামপাসের স্থিতিশীলতা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হয় এমন সব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান করছি, শিক্ষার্থীদেরকে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে নিরাপত্তা দিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এই বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে চাকসুর এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক বলেন, প্রো-ভিসি (উপ-উপাচার্য) বক্তব্য দিয়েছেন ১৪ ডিসেম্বর। চাকসু বিবৃতি দিচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর। আমি এই বক্তব্য প্রত্যাখান করছি। চাকসুকে রাজনৈতিকভাবে দলীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলকালাম হওয়ার পর ভোরে বিবৃতি এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো।

তিনি আরও বলেন, চাকসু নেতারা যদি গতকালের ঘটনা মীমাংসাই করতে যেতেন, তাহলে ঘটনার আগেই বিবৃতি দিয়ে তা স্পষ্ট করতেন। সব ঘটনা ঘটার পর রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এ বিবৃতি সামনে এসেছে। ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর আকাঙ্ক্ষা ধারণ না করে সংকীর্ণ স্বার্থে চাকসুর যে রাজনৈতিক ব্যবহার তার নজির হয়ে থাকলো।

এর আগে, গত ১৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। তারা (পাকিস্তান সেনাবাহিনী) ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা জীবিত না মৃত অবস্থায় ফিরবে- সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এই ধারণা রীতিমতো ‘অবান্তর।

এ বক্তব্যটিকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ১৪ ডিসেম্বর (রোববার) রাতে উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সব গেটে তালা লাগিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তারা। 

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির মুখোমুখি অবস্থান নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বাইরে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। এসময় তাদেরকে ‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। 

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩৬ বছর পর গত ১৫ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ অক্টোবর ভোরে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী চাকসুর নির্বাচিত ২৬ প্রতিনিধির মধ্যে ভিপি, জিএসসহ ২৪ জনই শিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্যানেল থেকে বিজয়ী হয়েছেন। বিপরীতে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন আইয়ুবুর রহমান তৌফিক। এবং স্বতন্ত্র থেকে সহ খেলাধুলা ও -ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে তামান্না মাহবুব প্রীতি নির্বাচিত হয়। 

প্রতিনিধি/এজে