images

সারাদেশ

পাকবাহিনীর নির্মম নির্যাতনে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন

জেলা প্রতিনিধি

১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৪১ এএম

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথায় জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকে। নৌ-কমান্ডো হিসেবে জীবন বাজি রেখে শত্রুপক্ষের শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসের অভিযানে যোগ দেন তিনি। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তার অসীম সাহস ও আত্মত্যাগ আজও নতুন প্রজন্মকে সংগ্রামের শক্তি জোগায়। ইতিহাসে সাহস ও বীরত্বের এক অমর প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে যে কয়টি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে রূপসা নদীতে সংঘটিত যুদ্ধটি। যে যুদ্ধে ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন অপারেশন শেষে তীরে ওঠার সময় পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন।

মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আজহার পাটোয়ারী এবং মাতার নাম জোলেখা খাতুন। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। তারা ছিলেন ছয় ভাইবোন। শিক্ষাজীবন শেষে মোহাম্মদ রুহুল আমিন একজন ইঞ্জিন রুম আর্টিফিসার হিসেবে তার পেশাগত জীবন শুরু করেন।

মক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ

১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে রুহুল আমিন তার কর্মস্থল এবং জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের মুক্তির জন্য লড়াইয়ে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে কলকাতার গার্ডেনরিচ নৌ ওয়ার্কশপে দুটি বাফার গান ও মাইন পড যুক্ত করে গানবোটে রূপান্তরিত করা হয়। গানবোট দুটির নামকরণ করা হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। পলাশের ইঞ্জিন রুমের আর্টিফিসার হিসেবে নিয়োগ পান রুহুল আমিন।

মোংলা বন্দরের কাছে অবস্থিত পাকিস্তানি নৌ ঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে ৬ ডিসেম্বর ‘পদ্মা’, ‘পলাশ’ ও মিত্র বাহিনীর গানবোট ‘পাভেল’ ভারতের হলদিয়া নৌ ঘাঁটি থেকে রওনা হয়। ১০ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় কোন বাধা ছাড়াই প্রথমে মোংলা ও দুপুর ১২টায় খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি গানবোট তিনটি পৌঁছালে, তাদের অনেক ওপরে তিনটি জঙ্গি বিমান দেখা যায়। পদ্মা-পলাশ থেকে বিমানের দিকে গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে জানান। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিমানগুলো গুলি ও বোমাবর্ষণ শুরু করে। পলাশের কমান্ডার সবাইকে গানবোট ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু রুহুল আমিন পলাশেই অবস্থান নেন এবং আপ্রাণ চেষ্টা চালান গানবোটকে সচল রাখতে। হঠাৎ একটি গোলা পলাশের ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে এবং তা ধ্বংস হয়ে যায়।

বাধ্য হয়ে রুহুল আমিন আহত অবস্থায় কোন রকমে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা নির্মমভাবে অত্যাচার করে তাকে হত্যা করে। তার মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে স্থানীয় লোকজন বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীর পাড়ে দাফন করে এবং সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম।

প্রতিনিধি/এফএ