images

সারাদেশ

১৫ মাস পর প্রকাশ্যে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ওসি মঞ্জুর কাদের, তোপের মুখে

জেলা প্রতিনিধি

১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৫ পিএম

নারায়ণগঞ্জে ভুক্তভোগীদের তোপের মুখে পড়েছেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন আওয়ামীগের আমলে দায়িত্ব পালন করা ওসি মঞ্জুর কাদের। ভুক্তভোগীদের ধারণা ছিল গেল বছরের আগস্টে অভ্যুত্থানের পর ওসি মঞ্জুর কাদের পালিয়ে গেছেন, কিন্তু রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তাকে পেয়ে ভুক্তভোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের আওয়ামী আমলে নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সোনারগাঁ থানায় বিভিন্ন মেয়াদে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত সরকারের আমলে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন মঞ্জুর কাদের।

নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনকালীন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেন মঞ্জুর। ঘটনাস্থল থেকে সাবেক এ পুলিশ কর্মকর্তাকে নিরাপদে সরে যেতে সহায়তা করেন বিএনপির লোকজন।

বাংলাদেশ লʼইয়ার্স কাউন্সিলের জেলার সহকারী সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের আন্দোলনে তিনি ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি নগরীর ব্যাপারীপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার হন সাইফুল ইসলাম ও তার মামাতো ভাই। পরে তাদের থানায় তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুর কাদেরের নেতৃত্বে অমানুষিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন সাইফুল।

আরও পড়ুন

নারায়ণগঞ্জে লুট হওয়া ৪০টি অস্ত্র ও ৭ হাজার ৫১৮ রাউন্ড গুলির হদিস নেই

২০১৬ সালের দিকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের নারায়ণগঞ্জ সদর থানা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাইফুল। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক উইং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সহকারী সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, আমাকে ও আমার মামাতো ভাইকে ওসি মঞ্জুর কাদের তার রুমে নিয়ে এক ঘণ্টা টানা পিটাইছে। তারপর তিনদিন গুম করে রাখছে। আমার পরিবারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাও নিয়েছিল। আজ সেই মঞ্জুর কাদেরকে ডিসি অফিসের নিচে দেখতে পাই। তখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করি পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি দৌঁড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেএম শাখায় গিয়ে লুকান। সেখানে গিয়ে তাকে পেলেও বিএনপিপন্থি কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় এবং পরে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।

মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে আইন বহির্ভূতভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেন আরেক আইনজীবী ও সাবেক শিবির নেতা অ্যাডভোকেট তাওফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা আমৃত্যু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এই মঞ্জুর কাদের ছিলেন একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। তাকে আমরা পুলিশে দিতে চেয়েছিলাম, বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের কারণে তা পারিনি। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পরপরই মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানান সাইফুল ইসলাম। তবে, তার ধারণা ছিল ‘মঞ্জুর কাদের বিদেশে পালিয়ে গেছেন’, এ কারণে পরে তিনি মামলা করেননি। তবে, সোমবার তিনি মামলা করবেন বলেও জানান।

ঘটনাস্থলে থাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, জামায়াতের আইনজীবীরা সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকে মব জাস্টিসের পর্যায়ে নিতে চেয়েছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে আইন-বহির্ভূত এমন কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য আমরা পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। এবং পরে সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তা সেখান থেকে সেফলি চলে যান।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, এমন কোনো ঘটনার খবর আমরা পাইনি। এমনকি আইনজীবীরা কিংবা সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তাও আমাদের কোনো অভিযোগ জানাননি।

প্রতিনিধি/এসএস